কুলাউড়ায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ঠিকাদারকে নির্যাতনের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ করে ২৯ জুলাই প্রেসক্লাব কুলাউড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঠিকাদার আব্দুল হামিদ (৪৫)। এক হাত ভাঙাসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর জখম নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিভৎসতার করুন চিত্র তুলে ধরেন।

সন্ত্রাসীদের নির্মমতার শিকার কুলাউড়ার ঘাগটিয়া গ্রামের ঠিকাদার হামিদ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত ৪ জুলাই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে জয়চন্ডি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও ধানের শীষ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী রুমেল খানের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জনের একটি দল আমাকে (আং হামিদ) হযরত গফুর শাহ (র:)এর মাযারের সামনে আক্রমণ করে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আমাকে অপরহরণ করে রুমেল খান তার বাড়ীর মুরগির ফার্মের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রাণে মারার লক্ষ্যে মাথায় দা দিয়ে কুপ দেয়।

এসময় হাত দিয়ে আটকাতে চাইলে বাম হাতের মধ্যমা আঙ্গুল হাড়সহ কেটে পড়ে। পরে রুমেল খান ও তার সহযোগীরা রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। আমি চিৎকার দিলে সে আমার মুখের ভেতর বন্দুক ঢুকিয়ে রাখে। ঘন্টাব্যাপী নির্যাতন চালানোর পর আমাকে মৃত ভেবে ফেলে রাখে এবং আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

রাত ৯ টার দিকে কুলাউড়া থানা পুলিশ আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে।

ঠিকাদার আব্দুল হামিদ জানান, সময়মতো পুলিশ আমাকে উদ্ধার না করলে সন্ত্রাসী রুমেল খান আমাকে জানে মেরে ফেলত। রুমেল খান আমাকে আঘাত করে আর বলে তকে হত্যা করে লাশ ফার্মের ঘরে পুতে রাখবো।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ উদ্ধার করল আমাকে, কিন্তু কোন আসামীকে আটক করেনি এখনও। আমার অভিযোগটিও নিতে চায়নি পুলিশ। পরে ৯৯৯ ফোন করে সহায়তা চাইলে কনফারেন্সে ৯৯৯ এর কর্মকর্তা কুলাউড়া থানা পুলিশকে বলার পর কুলাউড়া থানা পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করে। কিন্তু ঘটনার ২৫ দিন পার হলেও নির্যাতনকারী রুমেল খান ও তার সহযোগীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।

এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুমেল খানের এক ছেলে ও আব্দুল হামিদের এক ছেলে একই ক্লাসে পড়ে। দু’জনই পায়রা পালন করে। পায়রার বাচ্চাকে নিয়ে রুমেল খানের ছেলে ও হামিদের ছেলে ঝগড়া হয়। এ ঝগড়ার রেশধরে রুমেল খান ছেলের পক্ষ হয়ে এ হামলা ঠিকাদার আব্দুল হামিদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।

এব্যাপারে জয়চন্ডি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহবুব জানান, হামিদকে মাজার থেকে ধরে নিয়ে ফিল্মিস্টাইলে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এবং একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। এটা একটা অমানবিক ঘটনা। খবর পেয়ে আমি পুলিশ পাঠিয়ে রুমেল খানের বাড়ি ঠিকাদার আব্দুল হামিদকে উদ্ধার করিয়ে হাসপাতালে পাঠাই। এরপর বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তারা আইনের দ্বারস্থ হয়েছে।

এব্যাপারে ওসি আব্দুস ছালেক জানান, মারামারির ঘটনা অনেক সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান মিমাংসা করে দিতে চান। এই ঘটনাও এমন হতে পারে। সমাধান না হলে হামলার শিকার ওই ব্যক্তি আমার কাছে আসলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।