চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘর-বাড়ি, ফসলি মাঠ সবকিছুই বন্যার কবলে। তাই আশ্রয়কেন্দ্রেই এখন তাদের বসবাস। রাস্তাঘাট ভেঙে একটা দ্বীপে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। বলছিলাম মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কথা।
ঈদের দ্বিতীয় দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় প্লাবিত হয়ে মানুষজন আশপাশের বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। ঘর-বাড়ি, ফসলি মাঠ, শৌচাগার পানির গভীরে ডুবে আছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কারও মুখেই ঈদের আনন্দের কোনো ছাপ নেই। অন্ন-বস্ত্রের জন্য তাদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে।
সোমবার (১১ জুলাই) দুপুরে সাদিপুর গ্রামে ‘উই ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংস্থা ট্রাকে করে কোরবানির মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছিল। তারা পৌঁছাতেই অভুক্ত শিশুরা হাড়ি-পাতিল নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল একটু খাবারের জন্য।
একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে ‘সাইবার সেফটি ফার্স্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন ‘এক বেলার আহার’ নিয়ে এসেছে। বন্যায় প্লাবিত প্রতিটি ঘরে তারা নৌকায় করে পৌঁছে দিয়েছে ‘এক বেলার আহার’।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলে, ‘এতদিন ডাল, আলু দিয়ে ভাত খেয়েছি। আজ মাংস দিয়ে ভাত খেতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। খুব ইচ্ছা ছিল সবার মতো এই ঈদে আমিও মাংস দিয়ে ভাত খাবো। অবশেষে আমার মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’
একই গ্রামের সামিয়া বেগম আনন্দের সাথে বলেন, ‘নতুন জামা না থাকলেও আজ মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে ঈদ করবো! অনেকদিন ধরে গরুর মাংস খাই না। আজ স্যারেরা অনেকগুলো রান্না করা মাংস দিয়েছেন।’
ফুলেরতল গ্রামের বাছন মিয়া বলেন, ‘২০০৪ সালের পর এবার এত ভয়াবহ বন্যা এসেছে। রান্না করতে হলে কাঠ কিনে আনতে হয়। আজ রান্না করা খাবার পেয়ে সুবিধা হয়েছে। আমার নাতি মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে আজ। তার এই খুশি দেখে আমার মনে ঈদ এসেছে। ধন্যবাদ জানাই যারা এসবের আয়োজন করেছেন।’
‘সাইবার সেফটি ফার্স্ট বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কে বি খান বিজয় বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটা মূলত সাইবার অপরাধ দমনের। তার পাশাপাশি এটি একটি সামাজিক সংগঠন। আমরা ঈদ উদযাপন ভালোভাবে করতে পারলেও বানভাসিরা ঈদ উদযাপন করতে পারছে না। তাই আমরা আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। বন্যাকবলিত আমার বাবা, মা, ভাই, বোনদের জন্য ‘এক বেলার আহার’ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ ২৫০ প্যাকেট খাবার, সাথে ওষুধ ও স্যালাইন বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।’
‘উই ফর বাংলাদেশ’র স্বেচ্ছাসেবী শাহ ফাহিম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ২০২২ সালের বন্যায় আমরা ৪র্থ বারের মতো বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৪০০ কেজি মাংসের তরকারি এবং ১০০ কেজি চালের ভাত নিয়ে আজকের প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে পেরেছি। দেশের যেকোনো দুর্যোগে উই ফর বাংলাদেশ পাশে ছিল, আছে, ইনশাআল্লাহ পাশে থাকবে।’