চরম সংকটকালে খুলছে বন্ধ থাকা ১৫০ প্রেক্ষাগৃহ। ঈদ উপলক্ষেই মৌসুমি সিনেমা হল মালিকদের এ উদ্যোগ। বর্তমানে নিয়মিত চালু আছে ৭০টির মতো প্রেক্ষাগৃহ। ঈদ এলে এই সংখ্যা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘এখন সিনেমা হল শুধু বন্ধ হয়, নতুন করে খুলে না। এই চিত্র কমপক্ষে ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকে। তবে সিনেমা হল ব্যবসার প্রধান দুই মৌসুম ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহাকে ঘিরে কাঙ্ক্ষিত মুনাফার আশায় কিছু বন্ধ সিনেমা হল খুলে। এসব সিনেমা হলকে বলা হয় মৌসুমি সিনেমা হল। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে যাচ্ছে সারাদেশে বন্ধ থাকা প্রায় দেড়শতাধিক সিনেমা হল।’
সব ঠিক থাকলে এবার ঈদে মুক্তির তালিকায় রয়েছে ‘দিন দ্য ডে’, ‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’ সিনেমাগুলো। প্রযোজক সমিতির কর্মকর্তা সৌমেন বাবু জানান, ঈদের আগে অফিস খোলা থাকা পর্যন্ত যে কোনো নির্মাতা চাইলেই তার ছবি ঈদে মুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে হিসেবে এখন দেখার পালা এই ঈদে তিন ছবির সঙ্গে আর কোনো ছবি যোগ হয় কি না।
মৌসুমি প্রেক্ষাগৃহ খোলার প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘দেশে এখন আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে দেশের কয়েক স্থানে বন্যা চলছে। এই দুই পরিস্থিতির আর অবনতি না হলে ঈদে অবশ্যই বন্ধ থাকা প্রায় দেড়শ’ সিনেমা হল খুলতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কমপক্ষে নব্বই দশক পর্যন্ত দেশে বন্ধ সিনেমা হল এবং মৌসুমি সিনেমা হল বলে কিছু ছিল না। নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকলসহ নানা নেতিবাচক কারণে সিনেমা হল যখন সব শ্রেণির দর্শক হারাতে শুরু করে এবং ভালো ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে লোকসান গুনতে গিয়ে দর্শকবিহীন সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক পড়ে যায়, তখনই বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কিছু সিনেমা হল বছরের দুই ঈদে ভালো ব্যবসার আশায় মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে থাকে। সে হিসেবে এবারের ঈদেও দেড় শতাধিক বন্ধ সিনেমা হল মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে পারে।’
দেশে এখন নিয়মিত গড়ে ৬০-৭০টির মতো সিনেমা হল খোলা থাকে। আর ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে বন্ধ সিনেমা হল খুললে সর্বমোট ২৫০টির মতো সিনেমা হলে দর্শক ঈদের ছবি দেখতে পারে। তাই নির্মাতারাই পারেন ভালো ছবি নির্মাণ করে শুধু ঈদ নয়, স্বাভাবিক সময়েও দেশের বন্ধ সিনেমা হল খোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘বন্ধ সিনেমা হল খুলে মানসম্মত ছবি পেলে। তাই নির্মাতাদের কাছে সিনেমা হল মালিকদের অনুরোধ, আপনারা মানসম্মত ছবি নির্মাণ করুন। এতে আপনারা এবং আমরা সিনেমা হল মালিকরা সমানভাবে উপকৃত হব।’
ঈদের ছবি নিয়ে যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়, সেটা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিয়া আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আগে হলের মালিকদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। কে কোন ছবি তাদের হলে দেখাবেন, এটা নিয়ে যে আগ্রহ ছিল; এখন তেমনটা নেই। বেশির ভাগ হল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর যেগুলো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ সিনেমা চালানোর মতো অবস্থায় নেই। এক ঈদের সিনেমা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সেটার জন্য চেইন অব কনটেন্ট লাগবে। সিনেমা হলের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে দর্শক স্বস্তিবোধ করেন।’
উল্লেখ্য, নব্বই দশকের শেষভাগ পর্যন্ত দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৩০টি। মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে লোকসান গুনে অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। খোলা আছে ৭০টির মতো। আর দেশের প্রায় ২৭টি জেলা পুরোপুরি সিনেমা হলশূন্য।