আজ ১০ অক্টোবর পালিত হবে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে-‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার দূর করা ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ ১৯৯২ সাল থেকে ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন কর্মসূচির সূচনা করে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) দিবসটি উপলক্ষে রেলি, আলোচনাসভা, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার ও ব্যানার প্রদর্শন, বিনা মূল্যে মানসিক চিকিৎসাসেবা প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মানসিক রোগ সম্বন্ধে অজ্ঞতা, ভ্রান্ত ধারণা, ভীতি, লোক লজ্জা ও বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে মানুষ মানসিক রোগের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার পরিবর্তে অপ্রচলিত অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গ্রহণ করছে। ফলে মানসিক রোগ নিরসনের পরিবর্তে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে।
সম্প্রতি এক গবেষণার তথ্যমতে, দেশের প্রায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। অথচ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানসিক রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, আধুনিক নগরায়ণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি, অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ও মনোসামাজিক কারণে দেশে দিনদিন মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার অনেকে মানসিক সমস্যাকে রোগ মনে করে না। বিশেষ গুরুত্বও দেন না এবং সঠিক চিকিৎসা করাতেও উদ্যোগী হন না। ফলে মানসিক সমস্যা ভেতরে ভেতরে আরও বেশি বাড়তে থাকে।
এদিকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বাণীতে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য মানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করার এবং কমিউনিটিতে পরিপূর্ণভাবে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়। তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বে প্রতি আট জনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠী।
দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি
ভালো নেই মানসিক স্বাস্থ্য। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) যৌথ গবেষণায় দেখো গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানসিক রোগাক্রান্ত। উদ্বেগ আধিক্য চার দশমিক সাত শতাংশ, বিষণ্নতা ছয় দশমিক সাত শতাংশ। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ মানসিক রোগাক্রান্ত। নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার পাঁচ দশমিক এক শতাংশ। কনডাক্ট ডিজঅর্ডার এক দশমিক ৭ শতাংশ। জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার চার দশমিক ৭ শতাংশ।
মাদক গ্রহণের চিত্রে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিন দশমিক তিন শতাংশ মাদক গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চার দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ আর দশমিক ৬ শতাংশ নারী। ১২ বছর থেকে ১৭ বছরের শিশু-কিশোররা এক দশমিক পাঁচ শতাংশ মাদক গ্রহণ করে আর ৭ থেকে ১১ বছরের মধ্যে দশমিক দুই শতাংশ শিশু মাদকাসক্ত।
অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজ আয়োজিত মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় গতকাল জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি আট জনে একজন মানসিক রোগী। আর ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছরে বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ। ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম