৫ দফা দাবীতে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের মিছিল

অবিলম্বে চা শ্রমিকদের (২০২১-২০২২) চুক্তি সম্পন্ন করা, ২০ মাসের এরিয়ার, ধর্মঘটকালীন মজুরী ও বোনাসের এরিয়ার টাকা প্রদান করাসহ ৫ দফা দাবীতে সিলেট নগরীতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির এই মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।

বাগানে বাগানে প্রচারপত্র বিতরণ, লাইন বৈঠক কর্মসূচি পালনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার চা শ্রমিকদের ৫ দফা দাবীতে প্লেকার্ড, ফেস্টুন সম্বলিত মিছিলটি মালিনীছড়া চা-বাগান থেকে শুরু হয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক কমরেড হৃদেশ মুদি’র সভাপতিত্বে ও চা শ্রমিক নেতা অরুন মুদির পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন সিলেট জেলার সমন্বয়ক কমরেড সুশান্ত সিনহা সুমন, চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা সন্তোষ বাড়াইক, শেলী দাস, সন্তোষ নায়েক, অঞ্জুলী মুদি, লাংকাট লোহার, বচন কালোহার, হরি সবর আলীবাহার বাগান পঞ্চায়েত শ্যামাচরন গোয়ালা, চা শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক বিরেন সিং, চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক অধির বাউরি প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘গত আগস্ট ২০২২ এ চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলন গোটা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছিল। সারা দেশের ১৬৭ টি চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ হারানোর ভয়, পেটের ক্ষুধা উপেক্ষা করে টানা ১৯দিন অনাহারে অর্ধাহারে থেকে বুক টান টান করে দাঁড়িয়েছিল ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরীর দাবীতে। প্রায় ১৬৮ বছরের দীর্ঘ বঞ্চনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চা শ্রমিকরা ১৯২১ সালের ঐতিহাসিক “মুল্লুকে চল” আন্দোলনের চেতনাকে পাথেয় করে বাগানে বাগানে ন্যায়সঙ্গত মজুরী, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা অধিকারের আন্দোলন গড়ে তোলে। তার ধারাবাহিকতায় আগস্ট আন্দোলনে চলাকালে মালিকপক্ষ ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা দৈনিক মজুরীর ঘোষণা করে। শ্রমিকরা তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে ৩০০ টাকা মজুরীর দাবীতে অনড় ছিল। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরী ঘোষণা করেন এবং ৩ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা অধিকারের দাবী বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে চা শ্রমিকরা তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো চা শ্রমিকদের ২০২১-২২ সালের চুক্তি সম্পন্ন হয়নি।মালিকপক্ষ শ্রমিকদের রক্ত পানি করা এরিয়ার টাকা না দেয়ার পাঁয়তারা করছে।’

বক্তারা বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক চা শ্রমিকের মনে প্রশ্ন এত লড়াই করে অর্জন করা এরিয়ারের টাকা কি চা শ্রমিকরা পাবে না? ডিসেম্বরে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এই চুক্তির কি হবে? শ্রম আইন অনুযায়ী ১৯ মাস ২৭ দিনের এরিয়ার টাকা, ধর্মঘট কালীন মজুরী ও ২ বছরের বোনাসের এরিয়ার টাকা শ্রমিকদের অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু মালিক শ্রেণী সবসময় শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে নিজেরা টাকার পাহাড় তৈরি করে।

তাই বক্তারা আগস্ট আন্দোলনের শিক্ষাকে পাথেয় করে মালিকদের এই টালবাহানার বিরুদ্ধে বাগানে বাগানে মতামত গড়ে তোলে চা শ্রমিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।