শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয়ের হাসি বাংলাদেশের

একসময় মনে হয়েছিল, জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ৩৫ রানেই যে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু মাঝের সময়ে শন উইলিয়ামসের দৃঢ়তায় বাড়তে থাকে আফ্রিকার দেশটির আশা। শেষে মঞ্চায়িত হয় রোমাঞ্চকর সব মুহূর্ত। উত্তেজনায় ঢেউ তোলা ব্রিসবেনের সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি বাংলাদেশের।

আজ (রবিবার) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের লড়াইয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান করে। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করতে পারে জিম্বাবুয়ে। তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে নতুন ইতিহাস লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের। এবারই প্রথম নির্দিষ্ট কোনও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

সেই জয়টাও এলো কত নাটকীতায়। জয় উদযাপন করেও আবার মাঠে নামতে হয় বাংলাদেশকে! মোসাদ্দেক হোসেনের করা শেষ ওভারের শেষ বলে স্টাম্পিং হলেন ব্লেসিং ‍মুজারাবানি। ১ বলে ৫ রানের প্রয়োজনীয়তা তাতে মিটলো না জিম্বাবুয়ের। বাংলাদেশের জয় উৎসব হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেলো উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান স্টাম্প ক্রস করার আগেই বল গ্লাভসে নিয়েছিলেন। আসে ‘নো’ বলের সিদ্ধান্ত। সেসময় জিম্বাবুয়ের শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার পড়ে ৪ রান। একটা বাউন্ডারি হলেই হয়। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশই হেসেছে। মোসাদ্দেকের শেষ বলটা ব্যাটেই লাগাতে পারেননি মুজারাবানি।

এর আগেও উত্তেজনার কমতি ছিল না ব্রিসবেনের ম্যাচটিতে। শুরুতে চাপে পড়লেও উইলিয়ামসের ব্যাটে আশা বাড়তে থাকে জিম্বাবুয়ের। চমৎকার ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। তার আউটেও আছে চরম উত্তেজনা। নিজের বলে নিজেই ফিল্ডিং করে দু্র্দান্ত থ্রোতে উইলিয়ামসকে রান আউট করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৪২ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করেছেন উইলিয়ামস।

তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন রায়ান বার্ল। এই ব্যাটার অপরাজিত ছিলেন ২৭ রানে। ২৫ বলের ইনিংসে তিনি মেরেছেন ২ চার ও ১ ছক্কা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চলছে তাসকিন আহমেদের ‘ম্যাজিক’। অন্তত প্রথম ওভারের পারফরম্যান্সে সেটি বলাই যায়। নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও যে প্রথম ওভারে উইকেট পেলেন এই পেসার।

উইকেট উদযাপন করতে মাত্র ৩ বল লেগেছে বাংলাদেশের। তাসকিনের হাত ধরে এসেছে প্রথম সাফল্য। এই পেসারের আগের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। পরের বলেই ডিপ থার্ডম্যানে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন জিম্বাবুয়েইন ব্যাটার। ফেরার আগে ৩ বলে ১ বাউন্ডারি করেন ৪ রান।

এখানেই শেষ নয়, পরের ওভারে বল হাতে নিয়ে আবারও উইকেট উদযাপনে মাতেন তাসকিন। এবার তার শিকার আফ্রিকার দলটির অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন। বেশ বাইরের বল খোঁচা মেরে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্ল্যাভসে ধরা পড়েন তিনি। ৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৮ রান করেন আরভিন।

তাসকিনের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আলো ছড়ালেন মোস্তাফিজ। বল হাতে নিয়েই উইকেট পেয়েছেন বাঁহাতি পেসার। শুরুটা মিল্টন শুম্বাকে দিয়ে। এই আউটে সাকিব আল হাসানের অবদান কম নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিয়েছেন চমৎকার এক ক্যাচ। শুম্বা স্টেট ব্যাট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল উঠে যাওয়ায় মিডঅফে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন সাকিব। ফেরার আগে শুম্বা ১৫ বলে করেন ৮ রান।

বাংলাদেশের পরের উইকেটের আনন্দটা সবচেয়ে বেশি। আউট হয়েছেন যে সিকান্দার রাজা! সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটার তো তিনিই। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে তাকে কিছুই করতে দেননি মোস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন আফিফ হোসেনকে। ৩ বল খেললেও রাজা রানের খাতা খুলতে পারেননি।

এরপর আবার তাসকিনের আঘাত। এবার তার শিকার রেগিস চাকাভা। সোহানের গ্ল্যাভসবন্দি হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ে উইকেটকিপার ১৯ বলে করেন ১৫ রান। তাতে তৃতীয় উইকেটের দেখা পান ডানহাতি পেসার।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলারও তিনি। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ১৯ রান দিয়ে তাসকিন পেয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তারই হাতে। মোস্তাফিজও ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। তার মতো ২ উইকেট নিতে মোসাদ্দেকের খরচ ৩৪ রান।

এর আগে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় পার করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সৌম্য সরকার ও লিটন দাস বিদায় নিলেন দ্রুত। তৈরি হলো চাপ। ওই মুহূর্তে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে পথে ফেরান শান্ত। শুধু তা-ই নয়, হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসও খেলে ফেলেন বাঁহাতি ব্যাটার। তবে দলের অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতায় স্কোর খুব বড় হয়নি বাংলাদেশের।

আজ (রবিবার) ব্রিসবেনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভ ম্যাচে হেসেছে শান্তর ব্যাট। তার ৭১ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্কোরের প্রায় অর্ধেকটাই এসেছে শান্তর ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান আফিফ হোসেনের। ১৯ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি খেলেছেন তিনি। এছাড়া ২৩ রান সাকিবের। আর ১৪ রান করেছেন লিটন দাস। এছাড়া আর কোনও ব্যাটার যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে।

জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল বোলার রিচার্ড এনগারাভা। এই পেসার ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ব্লেসিং মুজারাবানি ২ ওভারে ১৩ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫০/৭ (শান্ত ৭১, আফিফ ২৯, সাকিব ২৩, লিটন ১৪, মোসাদ্দেক ৭; মুজারাবানি ২/১৩, এনগারাভা ২/২৪)।

জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৪৭/৮ (উইলিয়ামস ৬৪, বার্ল ২৭*, চাকাভা ১৫, শুম্বা ৮, আরভিন ৮; তাসকিন ৩/১৯, মোস্তাফিজ ২/১৫, মোসাদ্দেক ২/৩৪)।

ফল: বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: তাসকিন আহমেদ।