১৩ বছরে বিদেশ গেছেন ৭৩ লাখ কর্মী

করোনাকালে সৌদি প্রবাসী সাত্তার মিয়া চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। দেশে ফিরেও খুব একটা স্বস্তির মধ্যে দিন কাটেনি তার। ঋণের বোঝা নিয়ে কোনমতে সংসার চলছিল। তারপর আবারও কাজের উদ্দেশ্যে চলে গেছেন সৌদি আরব। আশা করছেন— এবার তার আর্থিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে। গত মাসে তিনি বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে ঋণের কিস্তি শোধ করেছেন তার স্ত্রী। এভাবে চললে ভাগ্য সহায় হবে বলে মনে করেন সাত্তার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন প্রায় ৫ লাখ কর্মী। তবে তাদের মধ্যে কতজন আবারও বিদেশ গেছেন তার তথ্য নেই কারও কাছে। ২০২০ সালের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে কোনও কর্মী বিদেশ যেতে পারেনি। তাছাড়া পরবর্তী সময় ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মী গেছেন ৩৬ হাজার ৪৫১ জন।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আবারও পুরোদমে কর্মী পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। তবে মধ্যপ্রাচ্য এবং সিঙ্গাপুরে এই কর্মী যাওয়ার হার ছিল আগের তুলনায় বেশি। ওই বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মী গেছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। অর্থবছরের হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মী গেছে ২ লাখ ৮০ হাজার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯২০ জন। করোনাকালেও রেকর্ডসংখ্যক কর্মী যাওয়া শুরু করে গত বছরের নভেম্বর থেকে। নভেম্বরে এক লাখ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী বিদেশ যায়। এরপর নভেম্বরের রেকর্ড ভাঙ্গে ডিসেম্বরে। সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গত মার্চে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি কর্মী যায় বিদেশে। গত ৭ মাসে বিদেশে কর্মী গেছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ১৭ জন। আর আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৩ বছরে বিদেশে কর্মী গেছে ৭৩ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২০১৭ সালের মার্চে এক লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। ওই বছর মোট গিয়েছিলেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন, যা ছিল দেশের জন্য রেকর্ড। পরের বছর ২০১৮ সালে সাত লাখ ৩৪ হাজার এবং ২০১৯ সালে সাত লাখ কর্মী বিদেশে যায়।

উপজেলা পর্যায়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হাতে নেওয়া হয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে গৃহীত “৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে ১টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিএমইটির অধীনে বর্তমানে চলমান ৭০টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৫টি ট্রেডের পাশাপাশি প্রাক-বহির্গমন ও গৃহকর্মী পেশাসহ প্রায় ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি ও ১টি আইএমটি স্থাপিত হলে ১০৪টি টিটিসি এবং ৭টি আইএমটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং মোট প্রশিক্ষণ প্রদানের সক্ষমতা বছরে ৯ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেছেন, করোনার কারণে অনেক কর্মী ফেরত এসেছিলেন। গত অর্থ বছরের যে ১০ লাখ কর্মী গেছেন, তার প্রতিফলন আমরা রেমিট্যান্সের ওপর খুব দ্রুত গতিতে সামনে দেখতে পারবো।

গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সও এসেছে জুলাইতে। এ মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের এই অংক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের মে’তে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

বিএমইটি’র মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম বলেন, গত ৫০ বছরে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক ১০ লাখ কর্মী বিদেশ গেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছর হবে আরেকটি রেকর্ড ভঙ্গকারী বছর। এই বছর যাতে সেই সংখ্যা ১২-১৪ লাখ হয় সেই প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।

তথ্য সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন