সিলেট জেলা প্রেসক্লাব-মাহা অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেছেন, ‘সিলেটের সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি হিসেবে কাজ করে থাকেন। সাংবাদিকরা প্রশাসনের কাজকে তাদের লেখনির মাধ্যমে সহজ করে দেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহযোগিতার পাশাপাশি সকল দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সাংবাদিকদের পাশে ছিলাম, পাশে আছি, পাশে থাকবো।’

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টায় জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব-মাহা অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ও সদস্যবৃন্দের সহধর্মিণী ও সন্তানদের খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাবের এই আয়োজনের স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ফ্যাশন হাউজ ‘মাহা’।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল-এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি মঈন উদ্দিন, জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য ও সিটি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক শংকর দাস। এছাড়া ক্লাবের দুই কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সাংবাদিকদের সবসময় সজাগ থাকতে হয়। শতব্যস্ততার মাঝেও মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য খেলাধুলা প্রয়োজন। সাংবাদিক তাদের সহধর্মিণী ও সন্তানদের জন্য প্রেসক্লাবের এ অয়োজন একটি সময়োপযোগি উদ্যোগ। এ আয়োজনের ফলে সহকর্মীদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা পাবে। জেলা প্রেসক্লাবের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান আরো বলেন, সাংবাদিক সমাজ প্রশাসনের একটি অংশ। সিলেটের সাংবাদিকদের সাথে প্রশাসনের সুসম্পর্ক ও সমন্বয় চমৎকার। অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে পারিবারিক মেলবন্ধনের সুযোগ থাকে। এর মধ্য দিয়ে একে অন্যের মধ্যে হৃদ্যতা সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০৪১ সালে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি, সেসময় আমরা স্মার্ট সাংবাদিকতা দেখতে চাই।

বিশেষ অতিথি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মাহি উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সাংবাদিকদের সুখে-দুখে আমরা পাশে থাকব। যতদিন প্রয়োজন জেলা প্রেসক্লাবের আভ্যন্তরীণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আমার প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন হাউজ মাহা স্পন্সর হিসেবে থাকবে।’

সিলেটের ক্রীড়া উন্নয়নে সাংবাদিকদের আমরা সবসময় পাশে থাকার আহবান জানিয়ে সেলিম বলেন, ফ্যাশন হাউজ মাহা শুধু ক্রীড়া ক্ষেত্রে নয়, প্রতিবছর মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীদের ৪/৫ লাখ টাকা সহযোগিতা করে। সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তান থাকলে তাদেরও ফ্যাশন হাউজ মাহা মেধা বৃত্তি দিবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বিশিষ্ট চিকিৎসক আরমান আহমদ শিপলু বলেন, সাংবাদিকের লেখনিতে দেশ সমাজ উপকৃত হয়। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপ দিতে সাংবাদিকদের অবদান অনস্বীকার্য।

তিনি বলেন, ৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আল আজাদ বলেন, ‘বিগত দুই বছরে জেলা প্রেসক্লাব যে কর্মস্পৃহা দেখিয়েছে তার অন্যতম নেপথ্য কারিগর আমাদের জেলা প্রশাসক। তিনি অতিমারি করোনা এবং বন্যার সময়ও সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তাঁর সাড়া পেয়েছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা রাখি। আজকের এ আয়োজন আমাদের মেলবন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে।’

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত সিলেট জেলা প্রেসক্লাব-সীমান্তিক আন্তঃউপজেলা প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এই ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় মূল স্পন্সর ছিলো বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিক। কো-স্পন্সর ছিলো মা ও শিশু হাসপাতাল, কামরান-আসমা হেলথ সেন্টার।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাব-সীমান্তিক আন্তঃউপজেলা প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাব। রানার্স আপ হয় বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাব। এছাড়া ক্লাব পর্বে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব-সীমান্তিক আন্তঃজেলা প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন খেলায় চ্যাম্পিয়ন হন এএইচ আরিফ ও আবু বক্কর জুটি। রানার্সআপ হন শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল ও মোস্তাফিজ রোমান জুটি।

এছাড়া খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি প্রেসক্লাবকে সম্মাননা স্মারক ও অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দেরকে মেডেল ও বিজয়ীদেরকে ট্রফি ও নগদ প্রাইজমানি প্রদান করা হয়।

অভ্যন্তরীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লুডু একক খেলায় প্রথম হয়েছেন শাহ দিদার আলম নবেল, ২য় হয়েছেন পল্লব ভট্টাচার্য, ৩য় হয়েছেন মঈন উদ্দিন। সাপ লুডু এককে ১ম হয়েছেন দিব্য জ্যোতি সী, ২য় এনামুল কবির, ৩য় ফয়জুল আহমেদ। দাবা খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এ.এইচ. আরিফ, রানারআপ ইউসুফ আলী, তৃতীয় ইমরান আহমদ।

ক্যারাম এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এম আর টুনু তালুকদার, রানারআপ এ.এইচ. আরিফ, ৩য় নুরুল ইসলাম। ক্যারাম দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এ.এইচ. আরিফ-আশরাফ আহমদ জুটি, রানারআপ মঈন উদ্দিন-শংকর দাস জুটি, তৃতীয় টুুনু তালুকদার-দিব্য জ্যোতি সী জুটি।

প্লে কার্ড কল ব্রীজে ১ম এনামুল কবির, ২য় পল্লব ভট্টাচার্য্য, ৩য় নবীন সোহেল ও ইয়াকুব আলী (যৌথভাবে)। প্লে কার্ড ব্রে-তে ১ম হয়েছেন নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ, ২য় ছামির মাহমুদ, ৩য় আনন্দ সরকার। প্লে কার্ড টোয়েন্টি নাইনে ১ম হয়েছেন লিয়াকত শাহ ফরিদী-শংকর দাস জুটি, ২য় নাছির উদ্দিন-নবীন সোহেল জুটি, ৩য় নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ-ইয়াহিয়া মারুফ জুটি।

নতুন সদস্যদের মধ্যে সাপ লুডু খেলায় বিজয়ী ১ম আজহার উদ্দিন শিমুল, ২য় জয়ন্ত কুমার দাস। পরে প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী সকলের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন।