বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এবং একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় বাংলা নাট্যসাহিত্যের বিশেষ ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত নাটকের পান্ডুলিপি বাছাইয়ের মাধ্যমে ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী চিরায়ত বাংলা নাটক নির্মাণ ও মঞ্চায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেটের ব্যবস্থাপনায় সিলেট জেলার প্রযোজনা নানকার পালা নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। আব্দুল্লাহেল মাহমুদ রচিত নাটকটির নির্দেশনায় রয়েছেন ড. আহমেদুল কবির।
প্রযোজনাটির নবপাঠ ও সহনির্দেশনায় রয়েছেন আশরাফুল ইসলাম সায়ান এবং সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত।
দাসপ্রথার এক ঘৃণ্য নজির দৃশ্যমান ছিল এই পূণ্যভূমি সিলেটে। কথিত নান-রুটি দিয়ে কেনা সেই দাসের নামকরণ করা হয়েছিল- নানকার। ব্রিটিশ শাসনাধীন তখনকার সিলেট জেলায় জমির মালিক ছিল অসংখ্য। সমগ্র জেলা অসংখ্য ছোট ছোট তালুকে বিভক্ত হয়ে অসংখ্য জমিদারের হাতে পড়েছিল। অল্প জমির মালিক এই সকল ক্ষুদে জমিদাররা নিজেদের বিলাসী জীবনের খরচ জোগাতে প্রজাদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাত। দাখিলা ছাড়া খাজনা তোলা, মর্জিমতো খাজনার পরিমান বাড়ানো, মাসে মাসে নজরানা, উপহার, জরিমানা, ইচ্ছে হলেই উচ্ছেদ, কাছারিবাড়িতে নিয়ে খেয়ালখুশি শাস্তি প্রদান, নানকার নারীর সম্ভ্রম হরণ, খুন, নিজের কাজে বেগার খাটানো- যা ইচ্ছা তাই। নানকাররাও প্রতিবাদ করেছে- কখনো একাই, আবার কখনো সম্মিলিতভাবে।
১৯৩৮ সাল নাগাদ সুনামগঞ্জ, সিলেট সদর ও করিমগঞ্জ মহকুমায় নানকাররা এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ‘ভারত রক্ষা আইনে’র দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ সরকার ও জমিদার শ্রেণি আন্দোলনকারীদের দমিত করে। নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যায় আরো কয়েকগুন। ‘নানকার’ শব্দটি বর্তমান সময়ে খুব বেশি পরিচিত না হলেও, শব্দটি যেই অবস্থাকে নির্দেশ করে তা সকল সময়ে, সকল দেশেই পরিচিত শোষিত শ্রেণী। নাম বদল হলেও, শোষনের এই প্রক্রিয়া কখনোই নিঃশেষ হয়নি। হাকিম নড়লেও, হুকুম একই থেকে গেছে।
উক্ত শোষণের প্রক্রিয়াকে চিহ্নিতকরণ, অনুধাবণ ও এর অবসানে সচেষ্ট হতে দর্শক-অভিনেতাদের উদ্বুদ্ধ করার তাগিদে এই নাট্যভাষ্য নির্মাণ করা হয়েছে। ত্রিমাত্রিক এক কল্পিত ভুবনে ইতিহাসের ঘটনার পুনরূপায়নের মধ্য দিয়ে, বর্তমান সময়কে বুঝতে চাওয়াই এই নাটকের উদ্দেশ্য। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনিষা রায় অমি, দেবী রাজলক্ষী তালুকদার, রোহেনা সুলতানা, পরাগরেণু দেব তমা, মো. শিমুল হাসান, রুবেল রাজ, মিহরাব আহমদ চৌধুরী হোসাইন, অমিত পন্ডিত, প্রত্যাশা চৌধুরী শ্যামা, অনন্যা দাশ ঐশী, জ্যোতি সোম নূপুর, পূর্বা দাশ প্রমা, তুলসি বাউরি, এমরান আহমেদ রুবেল, দিপন তালুকদার, সুমন চক্রবর্তী, শুভ রঞ্জন দাশ, ধৃত তালুকদার, রাজীব দে চৌধুরী ও অসীম সরকার।
‘নানকার পালা’ প্রযোজনাটি উপভোগ করার জন্য সকলকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত।