সিলেটে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দ্রুত চালুর দাবি

নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দ্রুত চালুর দাবিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন সমিতির নেতৃবৃন্দ।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও সিলেট জেলা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্য আবুল কালাম এবং সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিলেট মেট্রো আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবীর (পলাশ) এ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।

স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বৃহত্তর সিলেট জেলা মালিক-শ্রমিক তথা আপামর জনসাধারণের দীর্ঘদিনের স্বপ্নে লালিত সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে যা বাংলাদেশের মধ্যে একটি আধুনিক স্থাপত্য শিল্প। ২০১৯ সালে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বৃহত্তর স্বার্থে ২/৩ দিনের নোটিশে আমাদের অন্তর্ভুক্ত সমিতিগুলোর সব গাডড়ি টার্মিনাল থেকে বের করে রাস্তাসহ আশপাশে অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকেই আমরা গাডড়ি পরিচালনা করে যাচ্ছি। ২০১৯ সালে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে আজ থেকে প্রায় ৩/৪ মাস পূর্বেই টার্মিনালের আধুনিকায়নের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আপনার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে আমাদের সমস্যাবলী উল্লেখপূর্বক টার্মিনালের সব ধরনের কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি। বর্তমানে আধুনিকতম টার্মিনাল উদ্বোধন না হওয়ায় যেমন টার্মিনালের ভেতরের কাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে যে আদৌ কি টার্মিনাল চালু হবে? বর্তমানে টার্মিনালে প্রতিদিন যানজট এমন পর্যায়ে এসেছে যে প্রায়ই গাড়ি ২/৩ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে দীর্ঘদিন যাবৎ নিরাপত্তাকর্মী রেখেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেটের মালিক-শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে যানজটসহ সব ধরনের যাবতীয় সমস্যা সমাধানকল্পে চলতি ডিসেম্বর মধ্যে টার্মিনাল উদ্বোধনসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিতে আপনার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর সিসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা ও বন্যার কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে।

এই বাস টার্মিনালের নকশায় সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে নকশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। আগে এই টার্মিনাল এলাকাটি ছিল ময়লার ভাগাড়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো টার্মিনালের প্রথম অংশের বর্হিগমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসঙ্গে থাকতে পারবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ। ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ। পুরুষ নারী ও বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন লোকদের ব্যবহার উপযোগী ৬টি টয়লেটও থাকবে এখানে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে। উপরে উঠার জন্য রয়েছে-লিফট। খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও ব্রেস্ট ফিডিং জোন।

টার্মিনালের দ্বিতীয় অংশে আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই বিল্ডিংয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে সড়কের সঙ্গে গোলাকার ৫ তলা টাওয়ার বিল্ডিংয়ে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস। যেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।

টার্মিনালের পেছনে তৃতীয় অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন, মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।