সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতিতে বহিষ্কারের ‘পালাবদল’

বহিষ্কার আর পাল্টা বহিষ্কারে তুমুল আলোচনায় সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতি। দু’পক্ষই সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে একে অপরকে বহিষ্কার করছে। বলতে গেলে বহিষ্কারের ‘পালাবদল’ চলছে সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতিতে। তবে কে কাকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

জানা গেছে, প্রথমে সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মো. মোহিদ মিয়াকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই সাথে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কয়ছর আলী জালালীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এসময় সংগঠনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক নাজির আহমদ স্বপনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সভাপতি গ্রুপ থেকে জানানো হয়, শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম হাদী ছয়ফুলের সভাপতিত্বে কার্যকরি কমিটির জরুরি সভায় সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়।

এদিকে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের সভা অনুষ্ঠিত হলেও বহিষ্কারের ঘোষণা আসে রোববার বিকেলে। এতে জানানো হয়, সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মো. মোহিদ মিয়া সংগঠনের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবের আত্মসাতকৃত ৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না করায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এসময় জানানো হয়, গত ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত কার্যকরি কমিটির সভায় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করলে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। ওই সময় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সবার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে উক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বারবার তাগদা দেওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি তারা আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেননি। তাই সভায় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাময়িক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। একই সাথে একটি অডিট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করে পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

বহিস্কারের পালাবদল খেলাটা শুরু হয় আরও কিছু সময় পর। পূর্বের বহিস্কার ঘোষণার জের ধরে বহিষ্কৃত বলয়ের নেতাকর্মীরা স্বয়ং সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ ও সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ নানান অভিযোগে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া শাহানূরুর রহমান।

তিনি বলেন- ‘আমাদের সংগঠনের আর্থিক হিসাব গায়েব করা ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোসহ নানান অভিযোগে গোলাম হাদী ছয়ফুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

বহিস্কারের ঘোষণা রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আসলেও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কার ঘোষিত) মো. ফয়জুল ইসলাম জানান, ‘গত ১৫ সেপ্টেম্বর সংগঠনের কার্যকরী কমিটির ৩১ সদস্যের মধ্যে ১৮ সদস্যের উপস্থিতিতে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে আমরা তাকে ১৮ আগস্ট মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের আর্থিক হিসেব উপস্থাপন করতে গত ১১ আগস্ট অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি মিটিংয়ে আসেন নি। ফলে আমাদের সংগঠনের এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে আমরা তাকে বহিষ্কার করি এবং ১৫ সেপ্টেম্বর সংগঠনের সহসভাপতি শাহানূরুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে রেজুলেশন করি। বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।’

তিনি জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরের হুমায়ুন চত্বর এলাকায় অবস্থিত রিয়াজ ম্যানশনের জালালাবাদ মটরস-এ অনুষ্ঠিত কার্যকরী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহানূরুর রহমান।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলামের পরিচালনায় কার্যকরী কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সহ সভাপতি পুলক কবির চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ মছব্বির, আরিফ আহমদ সুমন, নারায়ণ পুরকায়স্থ ফনি, কয়েস আহমদ, সহসাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, কয়ছর আলী জালালি, কোষাধ্যক্ষ মো. মুহিদ মিয়া, প্রচার সম্পাদক মো. ফখর উদ্দিন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রিমাদ আহমদ রুবেল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জুবেল আহমদ, নির্বাহী সদস্য মফিজ উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, জয়নাল উদ্দিন প্রমুখ।

মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন- ‘আমরা সংগঠনের সকল আইন কানুন মেনে সংগঠন বিরোধে কার্যকলাপ ও অর্থ আত্মসাৎ এবং আর্থিক হিসেব উপস্থাপনসহ নানান অভিযোগ করায় বহিষ্কৃত সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুলকে একাধিকবার বৈঠকে ডেকেও আমরা এর সদোত্তর পাইনি। ফলে কার্যকরী কমিটির এক তৃতীয়াংশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের কাছে সংগঠনের হিসাব-নিকাশসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হবে। কারো কোন গাফিলতি বা কোন ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেসব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’