সিলেটের বাজারে আগুন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ৫টি মনিটরিং টিম

সিলেটের বাজারে রমজান শুরু হতে না হতেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসাীরা। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে সব জিনিষপত্রের দাম। সুযোগ বুঝে যে যেভাবে পারে দাম নিচ্ছে। অসহায় ক্রেতারাও পণ্য কিনছে অধিক মূল্যে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্ব মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

রমজানে প্রয়োজনীয় ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। শনিবার (১১ মার্চ) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী এ সুযোগ নিচ্ছেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য সরবরাহ করতে বাজারে সংকট দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে।

সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী আতিকুর রহমান বলেন, সিলেটের প্রায় প্রতিটি পরিবারে একমাসের বাজার করার জন্য দোকানে আসে। এতে দোকান খালি হয়ে যায়। এ অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

সবজি বাজার অস্থির-

বাজার ঘুরে দেখা যায়, শসা প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাচা মরিচ ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা, লেবুর প্রতি হালি ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, সিম একদিন আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সোমবার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাল শাক প্রতি আঁটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কচুর লতি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে।

চাল, ডালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী-

সিলেটের কালিঘাটের পাইকারী বাজারে চালের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। প্রতি কেজি আটাশ ও পাইজাম ৬০ থেকে ৬২, নাজির শাইল ৭০ থেকে ৭৫, মোটা চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ময়দার বসÍা ১৭শ টাকা থেকে ২১শ ৫০ টাকা পর্যন্ত, ছোলা ৭৬ টাকা, আদা ১৬০ টাকা, মুগডাল ১৫৫ টাকা, মুসরী ডাল মোটা ১১০ টাকা ও ছোট ১১০ টাকা, দারচিনি সাড়ে ৪ শত টাকা, আলু ৩৫ টাকা, তেল ৫ লিটার ৭৯০ টাকা, ১লিটার ১৬০ টাকা, ২ লিটার ৩৩০ টাকা, পেয়াজ ১২০ টাকা, রসুন চায়না ২০০ টাকা, আদা ২১০ টাকা, মুগডাল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, মসুরী ডাল মোটা ১১০ টাকা, ছোট মসুরী ডাল ১৬০ টাকা, দারচিনি সাড়ে ৫শত টাকা, তেল ৫লিটার ৮শত টাকা, ২ লিটার তৈল ৩২৬, ১ লিটার তৈল ১৬৩ টাকা, রুআফজা ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫শত টাকা।

মাংসের বাজারে অসাধু চক্র-

সিলেটে মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু চক্র। সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দেয়। চাহিদা দেখলেই তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাশির মাংস বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে, সোমবার সন্ধার দিকে গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। মুরগীর বাজারে ছিল অস্তিরতা। সোমবার সকালের দিকে ২১০ টাকা কেজি ব্রয়লার মোরগ বিক্রি হলেও সন্ধার দিকে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া মোরগরে হালি একদিন আগে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সোমবার ব্রয়লার মুরগীর ডিম ৫০ থেকে ৫৫টাকা ,হাসের ডিম ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ মোহাম্মদ রাসেল হাসান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রনে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্র্যাব নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং করা হয়েছে। বাজারে কোনো ধরনের সংকট হবে না। মহানগরে ৫ জন এডিসির নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ইউএনওদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বাজার মনিটরিং করা হবে।

খেজুরে বিভ্রান্তি

রমজানের অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুর। নামে বেনামে বিভিন্ন দেশের নাম ব্যবহার করে ক্রেতাদের পকেট কাটা হচ্ছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় সব ধরনের খেজুরে দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। ইরাক থেকে আমদানি করা খেজুর ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইরানের মরিয়ম প্রিমিয়াম ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, সৌদিআরবের জারুয়া ১১০০ টাকা, আলজারিরা খেজুর ৬০০ টাকা, আমেরিকার মেটজুল ১৭০০ টাকা।

তবে, একাধিক ক্রেতা জানান, এ ধরনের নাম দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। অধিক টাকা নেওয়ার জন্য তাদের নিজস্ব তৈরি নাম এগুলো।