দেশের অন্যান্য জায়গার মতো সিলেটেও উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে তিনটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্ণার খোলা হয়েছে। যাতে ভর্তি আছেন ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতায় জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভিাগ সংশ্লিষ্টরা।
বর্ষার অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। আর এডিস মশার বিস্তারে সিলেটেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৬ মাস ৭ দিনে সিলেট বিভাগে ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৮১ জনই সিলেটের। এছাড়া বাকি ৪ জন মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ১২৬ জন।
বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৯ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে শনাক্ত হয়েছেন একজন ডেঙ্গু রোগী।
শনিবার (৮ জুলাই) সকালে এসব তথ্য জানান সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শরীফুল হাসান। তিনি বলেন, সিলেট মহানগর ও জেলার পাশাপাশি বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা। তিনি জানান, বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের ১২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৪ জন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট, মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে একজন করে রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ (পুরুষ ও মহিলা), শিশু এই তিনটি ওয়ার্ডে পৃথক তিনটি ডেঙ্গু কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ টিম করা হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে এটি মোকাবিলা করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, সিলেট বিভাগে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সেই রোগীর ঢাকা ভ্রমণের রেকর্ড পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ঢাকা ভ্রমণের সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানা তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এ সময়ে সতর্ক থাকার কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। আর ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত পয়লা জুন থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসছি। আমাদের প্রশিক্ষিতকর্মীদের পাশাপাশি ১০ জন স্বেচ্ছাসেবীও এডিসের লার্ভা ধ্বংস করা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তিনি নাগরিকদের এ ব্যাপারে সচেতন ভ’মিকা রাখতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাই যদি নিজ নিজ আঙিগনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি, যে সকল জায়গায় এডিনের লার্ভা জন্মাতে পারে তা চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারি তাহলে ডেঙ্গু মোকাবেলা সহজ হবে।