কবি সুকান্ত লিখেছিলেন ‘আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি’, কিন্তু সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ও গবেষণায় ১৭ বছরেই বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের জয়ধ্বনি তুলেছে। উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর সিলেট এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত অবস্থায় থাকতো। দেশি জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি লালন-পালন, মৎস্যচাষে অযত্ন-অবহেলা গোটা সিলেট অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই কৃষি বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষাদান, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১৭ বছর আগে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর উত্তর পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
সিলেট বিভাগীয় শহর কেন্দ্র হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে টিলাগড় নামক স্থানে ২০.২৩ হেক্টর (৫০ একর) জায়গা নিয়ে গড়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। এছাড়াও মূল ক্যাম্পাস থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তামাবিল বাইপাস রাস্তার উত্তর পাশে বিকেএসপি-এর পূর্ব দিকে ৪.৯৭ হেক্টর (১২.২৯ একর) এলাকায় বহিঃক্যাম্পাস হিসেবে গবেষণা মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।
বর্তমানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৭টি অনুষদ থেকে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। অনুষদগুলো হলো, (১) ভেটেরিনারি, এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদ, (২) কৃষি অনুষদ, (৩) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ (৪) কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, (৫) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, (৬) বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ এবং (৭) পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদ।
গত ১ বছরের সাফল্য
গবেষণা হয়েছে পুরোদমে : গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে উল্লেখযোগ্য কিছু গবেষণা হয়েছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে আধুনিক মানের কিছু গবেষণাগার উদ্বোধন হবার কারণে। কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ১০ অক্টোবর ‘আন্ডার গ্রাজুয়েট ল্যাবরেটরি-০১, আন্ডার গ্রাজুয়েট ল্যাবরেটরি-০২ এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ল্যাবরেটরি’ নামে ৩টি গবেষণাগার উদ্বোধন হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর পিএমএসি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের ‘ডায়াগনস্টিক ল্যাব’ উদ্বোধন হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই ল্যাবে এখন আরো সহজে গবাদিপশু, পোষা প্রাণী ও পাখির নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এখানে রয়েছে মলমূত্র পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, এক্স রে, আলট্রাসনোগ্রাফি, ছোট অপারেশন, বন্ধ্যাত্বকরণ, খোঁজা করণ, সিজারিয়ান অপারেশনসহ অনস্পট সার্ভিসের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা। এ ছাড়া পোষা প্রাণীর বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক (টিকা) ও পিএমএসি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে প্রদান করা হচ্ছে। লাইব্রেরিতে যুক্ত হয়েছে ই-রিসোর্সেস সেন্টার। ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এই ই-রিসোর্সেস সেন্টার উদ্বোধন করেছেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। অন্যদিকে ৮ ফেব্রæয়ারি ফিজিওলজি বিভাগের উদ্যোগে রিনোভেটেড আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করা হয়েছে।
দেশ বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি : গতবছরের শেষ কর্মদিবসে জার্মানির সাথে গবেষণায় যুক্ত হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সাম্প্রতিককালে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এক অভূতপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। ম্যাক্স প্ল্যাংক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (ইনস্টিটিউট) প্রতিথযশা বৈজ্ঞানিকেরা সেখানে কাজ করে চলেছেন। টওসিমেন শহরে স্থাপিত ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজি টওসিমেন (Max Planck Institute for Biology Tübingen) এর সমন্বিত বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বিভাগের সাথে (Department of Integrative Evolutionary Biology) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অন্যদিকে ৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের দ্যা নিউটিয়া ইউনিভার্সিটির সাথে সিকৃবির নতুন একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ২০ জানুয়ারি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক কৃষি ও বিজ্ঞান শিক্ষার অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
এদিকে নরওয়ের ওসলো ইন্টারন্যাশনাল রোটারি ক্লাবের সাথে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। সবগুলো চুক্তির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বহিরঙ্গনের পরিচালক ড. তিলক চন্দ্র নাথ। এসব চুক্তির আওতায় দুই প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও গবেষণা স্টাফ এবং শিক্ষার্থী বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হলো। এছাড়া দুই প্রতিষ্ঠান এখন থেকে যৌথ গবেষণা, একাডেমিত লেকচার ও সিম্ফোজিয়াম এবং গবেষণার তথ্য আদান প্রদান করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিএসসি ও মাস্টার্স লেভেলে বৃত্তি সুবিধা লাভ করবে। বর্তমানে ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়। যদিও বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ অথবা জীবজগৎ বিষয়ে যতটা গবেষণা হয়েছে, সমুদ্রের ভৌত, রাসায়নিক এবং ভূতাত্তি¡ক বিষয়ে এখনো ততটা গবেষণা হয়নি। বঙ্গোপসাগর সম্পর্কিত বহু বিষয় এখনো অজানা। এবার সমুদ্র নিয়ে যৌথ গবেষণায় নামছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষি শিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর সমুদ্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সিকৃবি ও ঢাবি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
উদ্ভাবনী ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে ১ নম্বর : বাংলাদেশের ৪১টি প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ১ নম্বর স্থান অর্জন করেছে সিকৃবি। স্পেন ভিত্তিক সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাঙ্কিং (SCImago Institutions Rankings: https://www.scimagoir.com/rankings.php) এর ওয়েবসাইটে সম্প্রতি এই র্যাংকিং প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জলজ বিজ্ঞান বিষয়েও প্রথম স্থান অধিকার করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের মোট ৮৪৩৩ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা, সামাজিক, সামজিকতা, স্বাস্থ্য, উদ্ভাবনি প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয় যাচাই করে এই র্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়েছে। সামগ্রিক র্যাঙ্কিং-এ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫ নম্বর অবস্থানে। কৃষি শিক্ষা বিষয়ক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ১১তম স্থান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজিপুর ৪ নম্বর স্থান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২৬তম স্থান অর্জন করেছে। সিলেটের আরেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২২তম স্থান অর্জন করে।
সিলেটে কোরিয়ার চার গবেষক : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণা কাজে অংশ নিতে সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে কোরিয়ার চার গবেষক তাদের কার্যক্রম চালিয়েছেন। এই চার বিজ্ঞানী হলেন চিম্বুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ক্যাসিওন এস ইরম, কোরিয়ার কেডিসিএ-এর পরিচালক ড. জুং ওন জ্যু, ইন্টারন্যানাল প্যারাসাইট রিসোর্স ব্যাংকের পরিচালক ড. ডনমিন লি এবং আকে প্রতিথযশা বিজ্ঞানী হুনও কিম। তাঁরা মূলত প্রাণীদেহের ভেক্টর ও প্যারাসাইট নিয়ে কাজ করছেন। ভেক্টর একধরনের আর্থোপড জীব (যেমন মশা বা মাছি), যা একটি প্যাথোজেন বা পরজীবীকে একটি হোস্ট থেকে অন্য হোস্টে প্রেরণ করে। বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিস্তারে ভেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্যারাসাইট বা পরজীবী হল একটি জীব যা অন্য জীবের মধ্যে বা তার উপর বাস করে, যাকে হোস্ট বলা হয়। প্যারাসাইট হোস্টের কাছ থেকে পুষ্টি এবং আশ্রয় গ্রহণ করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া এবং বহুকোষী জীবসহ বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়। কোরিয়ান চার গবেষক সিকৃবির কেডিসিএ ইয়থ ক্লাবের সহায়তায় সিলেটের দলদলি চা বাগান, খাদিমনগরসহ কয়েকটি চা বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং প্যারাসাইট বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তাঁরা সিলেটের চা বাগান থেকে ভেক্টর ও প্যারাসাইট সংশ্লিষ্ট তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করছেন এবং সেগুলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করছেন।
কৃষি গুচ্ছের নেতৃত্ব দিলো সিকৃবি : ৮টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫৪৮ আসনের বিপরীতে লড়বে ৮১,২১৯ জনের পরীক্ষা নিয়েছে সিকৃবি। ৫ আগস্ট এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১১৬ আসন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩১ আসন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৫ আসন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৯৮ আসন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪৩ আসন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪৫ আসন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০ আসন এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ আসনের বিপরীতে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সমুদ্র দেখতে গিয়ে সৈকত পরিষ্কার করলো সিকৃবির শিক্ষার্থীরা : সেন্টমার্টিনে শিক্ষাসফরে গিয়ে সমুদ্র উপকূলের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) একদল শিক্ষার্থী। গত ১২ অক্টোবর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের লেভেল ৪ সেমিস্টার ২ এর শিক্ষার্থীদের একটি দল নিয়ে সিকৃবির ৩জন শিক্ষক শিক্ষাসফরে উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ছাড়েন। বঙ্গোপসাগরের নয়নাভিরাম চিত্র দেখতে সেন্টমার্টিন পৌঁছে এবং ১৬ অক্টোবর তারা সমুদ্র সৈকতে অনেক ময়লা আবর্জনা দেখতে পান। বিকেলেই শিক্ষকদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা উপকূল পরিষ্কার করতে নেমে যায়। মূলত ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে, ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের, ইকোফিস ২ প্রকল্পের সেন্টমার্টিন ব্লু-গার্ড টিমের সাথে, শিক্ষাসফররত মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই পরিষ্কার অভিযান চালিয়েছে। সেন্টমারটিন ব্লু-গার্ড টিমের ১০ জন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন জেলে এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। শিক্ষাসফরে থাকা কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ড. পার্থ প্রতীম বর্মন জনিয়েছেন, সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের প্রায় ৩০০০০ বর্গমিটার জায়গা থেকে মোট ৭০ কেজি বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ কেজি প্লাস্টিক বোতল, ২০ কেজি পলিথিন, ১৫ কেজি ছেড়া জাল ও দড়ি এবং ২৩ কেজি অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, এই শিক্ষাসফরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিকৃবি ফিশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. এম.এম. মাহবুব আলম, কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ড. পার্থ প্রতীম বর্মন এবং একোয়াকালচার বিভাগের সহকারী প্রফেসর মো. আবু কাওসার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সহায়তা করেছেন ইকোফিস-২ প্রকল্পের গবেষণা সহকারী মো. সোহেল রানা। এদিকে সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার অভিযানের কারণে সেন্টমার্টিন এলাকার মানুষের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়।
ভাইস-চ্যান্সেলরের কথা
প্রতি বছর কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করে সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিসিএস পরীক্ষাসহ দেশে বিদেশে সিকৃবির গ্র্যাজুয়েটদের ছড়াছড়ি। এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষি বিষয় প্রতিষ্ঠানগুলোতো বটেই, ব্যাংক থেকে সচিবালয় সবখানেই এখন সিকৃবির গ্রাজুয়েটদের দেখা মিলে। একজন ভাইস চ্যান্সেলরের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ গর্বিত। তাদের একাডেমিক জ্ঞানটুকু মাঠ পর্যায়ে সাধারণ জনগণের কাজে লাগছে।
নানাবিধ কারণে সমগ্র বিশ্বে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহ, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের জীবন ও জীবিকাকে ব্যাহত করেছে, কৃষি ও গবেষণা খাতকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে আপদকালীন সময়টি আমরা শক্তহাতে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছি। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন রূপকল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে এই বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে চলেছে। বলে রাখা ভালো যে, সম্প্রসারণ কর্মসূচি, তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃষির উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখতে পেরেছি। সরকারী সংস্থা, স্টেকহোল্ডার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী হয়েছে।
একটা সময় ছিলো যে, কৃষিকাজ করে কৃষক শুধু খেয়েপড়ে আর গামছা-লুঙ্গি পড়ে কোনরকমে বেঁচে থাকতো। এখন আর সেরকম দৃশ্য দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা অর্জনের পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে সব থেকে বড় সাফল্য এসেছে কৃষিতে। চার দশক ধরে খাদ্যে ঘাটতি থাকলেও দেশ এখন এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
[প্রফেসর ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা, ভাইস-চ্যান্সেলর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের কথা]
অন্যান্য শিক্ষকদের কথা :
(১)
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদম শুরু থেকে আমি আছি। তিল তিল করে এই প্রতিষ্ঠানের যে উন্নয়ন হলো তার বড় স্বাক্ষী আমি। বিশেষ করে গত ১ বছরে দুরন্ত গতিতে এগিয়েছে সিকৃবি। দক্ষ গ্রাজুয়েট হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের শিক্ষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে এখানে পাঠদান করে থাকেন। ব্যবহারিক ক্লাসগুলোও সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় যখন শিক্ষার্থীদের আমি ‘ভাইবা’ নিই দেখেছি, এখনকার জেনারেশন অনেক কিছুই জানে। এটা ভেবে আমি আনন্দিত যেন শুধু সার্টিফিকেটধারী গ্রাজুয়েট নয়, আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছি।
[প্রফেসর ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম, আহ্বায়ক, ডিন কাউন্সিল]
(২)
সিলেট বাংলাদেশে কৃষির ক্ষেত্রে একটি বিশেষায়িত অঞ্চল। কৃষির সার্বিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উপযুক্ত কৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এসকল গ্র্যাজুয়েট ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে তাদের উন্নয়সমূলক কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সিলেট অঞ্চলে পতিত জমির পরিমাণ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি ও কৃষি কাজ অবহেলিত হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মাছ চাষ ও গবাদিপশুর উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যুগোপযোগী বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহনের কারণে একাডেমিক ও গবেষণা কার্যকমে যে গতিময়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মাধ্যমে সিলেট তথা সারা দেশে কৃষি শিক্ষা ও কৃষি উন্নয়নে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
[প্রফেসর ড. মো. শহীদুল ইসলাম, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ]
(৩)
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই লগ্নে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা বৃন্দ, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, কর্মচারীবৃন্দ, এবং কর্মকর্তা বৃন্দের মত আমিও অত্যন্ত আনন্দিত এবং ভালোলাগা অনুভব করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সদস্য হিসেবে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পর থেকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আজ বাংলাদেশে অন্যতম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। অনেক অর্জনের সাথে সাথে আমাদের অনেক অপ্রতলতা রয়েছে যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। ৪৭টি বিভাগে সহায়ক কর্মচারী, কম্পিউটার অপারেটর, বিভিন্ন ল্যাবে, ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের হলগুলো সহ অন্যান্য দপ্তরে কর্মচারীর অভাব এবং অপ্রতুলতা রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত কোন কর্মচারী নিয়োগ হয়নি যার কারণে বিভিন্ন বিভাগ কর্মচারী ছাড়া তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিকভাবেই পড়েছে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিনের পরিবেশ ও খাবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের, এ বিষয়টি দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যে-কেয়ার কাম প্রি-স্কুল অত্যন্ত জরুরি এবং এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দাবি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সম্মানিত শিক্ষিকা এবং মহিলা কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের পুরো সময়, এমনকি অফিস সময়ের বাইরেও গবেষণার কাজে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবং দাপ্তরিক প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয়, তাই ঐসব পরিবারের সবচেয়ে কোমলমতি ছোট বাচ্চাদের জন্য একটি ডে কেয়ার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী।
কিউএস রেঙ্কিংএ একটি ভালো অবস্থানে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের ‘সেন্টার অব এক্সসিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের লক্ষ্য।
[প্রফেসর ড. মো. শাহ আলমগীর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি]
(৪)
হাওর বাওর ও টিলাবেষ্টিত সিলেট অঞ্চল কৃষিজ চাষাবাদের জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং টার্গেট ওরিয়েন্টেড গবেষণা এবং কমিউনিটি সার্ভিস প্রধানের নিমিত্তে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। সার্বিক মূল্যায়নের দিক দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে উন্নত গবেষণার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক-বৃন্দ যাদের দ্বারা সিলেট অঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের বৈপ্লবিক কৃষি উন্নয়ন সম্ভব। আধুনিক কৃষি শিক্ষায় যে পরিমাণ ভৌত অবকাঠামো, গবেষণা মাঠ এবং গবেষণাগার থাকা প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছে। এগুলোর উন্নয়ন করা সম্ভব হলেই দক্ষ কৃষি গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং সিলেট তথা বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
[প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা)]
সাংগঠনিক শিক্ষার্থীদের কথা :
কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ
কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ সমাজের জরাজীর্ণ কালিমা দূর করে সমাজকে সুন্দর, সাবলীল ও আলোকিত করার লক্ষ্যে নতুন সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞার হাত ধরে ১৫ই মে ২০০৮ সালে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে কৃষ্ণচড়া সাংস্কৃতিক সংঘ। এ সংগঠনে অভিনয়, নাচ, গান, নাটক, চিত্রকর্ম ও আবৃত্তিচর্চা করা হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানগুলো কৃষ্ণচড়া সাংস্কৃতিক সংঘ আয়োাজন করে থাকে। তাছাড়া সাপ্তাহিক আড্ডা, গানের আসর, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি, তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার মতো কাজগুলো এই সংগঠন করে থাকে। কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন যারা জয় বাংলা ইয়থ এওয়ার্ড পেয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারোও নতুন মুখদের বরণ করতে কৃষ্ণচূড়া আয়োজন করে ‘প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৩’। তাছাড়াও বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের স্মরণে, হুমায়ুন আহমেদ ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ গানের আসরের আয়োজন করে কৃষ্ণচূড়া। ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে শহিদমিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, দেয়ালিকা এবং স্মৃতিচারণ করা হয়। এ সংগঠন সবসময় তার কলাকুশলীদের আগলে রাখে। শুধুমাত্র গান-নাচ ছাড়াও সাংগঠনিকভাবে একজন মানুষকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তরুণ প্রজন্মের দেশপ্রেম ও দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলছে কৃষ্ণচূড়া।
[উম্মে হাসনাইন সেমন্তি মুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ]
মৃত্তিকা
কৃষি অনুষদের প্রথম ব্যাচের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর হাত ধরে কৃষি, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যচর্চার চিন্তা ধারাকে সামনে রেখে মৃত্তিকা পথচলা শুরু করেছিল। সমসাময়িক সময়ে মৃত্তিকার কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। কৃষক পর্যায় থেকে আসা সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করে থাকি। বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্রে প্রতি মাসের শেষ বৃহঃস্পতিবার মৃত্তিকার সদস্যদের অংশগ্রহণে প্রচারিত হয় কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘শ্যামল সিলেট’। যেখানে আমাদের কৃষি অনুষদের শিক্ষকরাই বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি ও কৌশলের সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে পরিবেশিত হয় কৃষি সংবাদ। ফসলের সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করে মৃত্তিকার সদস্যরা। মৃত্তিকার শিল্পীরা বেতারে কন্ঠাভিনয় করে ‘থাকব সুখে বারো মাস’ নাটিকায়, গায় লোকগান ও দেশাত্মবোধক গান। এছাড়াও প্রচারিত হয় বাংলা মাস ধরে ধরে প্রচার হয় ‘এ মাসের কৃষি’। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার বরাবরই কৃষি-কৃষক, মাটি ও পরিবেশের কাছাকাছি থাকাটাকে উপভোগ করেছি, যার শুরু হয়েছিল মৃত্তিকার হাত ধরেই। আমি মনে করি মাঠপর্যায়ের কৃষির জ্ঞান অর্থাৎ প্রায়োগিক কৃষি জ্ঞান এবং পুথিগত কৃষি জ্ঞানের সমন্বয়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম মৃত্তিকার মত সংগঠন যেখানে যুক্ত থকা এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
[রাকিবুল আলীম স্মরণ, সভাপতি, মৃত্তিকা]
প্রাধিকার
আমরা মূলত ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের প্রাণীদের সেবা দিয়ে থাকি। প্রাণীদের নিয়মিত ভ্যাক্সিনেশন ও ডিওয়ার্মিং করা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গাছে নেমপ্লেট লাগানো, পাখির নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করা, ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন সরীসৃপ প্রাণী রেস্কিউ করে বন্য পরিবেশে অবমুক্তকরণ ইত্যাদি কাজ করছে প্রাধিকার। গত ১৯ জানুয়ারি একটি ভুবন চিলকে ডানা ভাঙা অবস্থায় উদ্ধার করে তার অপারেশন এবং তার দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ৩ ফেব্রুয়ারি একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করে সেটিকে বন্য পরিবেশে উন্মুক্ত করে প্রাধিকার। ভালোবাসা দিবসে পাখির জন্য ভালোবাসা ব্যানারে বিভিন্ন গাছে হাড়ি বেঁধে দিয়েছি। ২৮ শে মার্চ মৌলভীবাজারে ১৪টি শকুন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি। তাছাড়া ফিঙে, প্যাঁচা, মুখপোড়া হনুমান, শালিক, কবুতর, কয়েক প্রজাতির সাপসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণি ও পাখি উদ্ধার করে, চিকিৎসা দিয়ে সেগুলোকে আবার বনে ফেরত পাঠিয়েছি। ২০১৮ সাল থেকে প্রাধিকারের সাথে যুক্ত আছি। সকলের জন্য একটি কথা বলতে চাই, মানুষের অধিকারের জন্য যেমন মানবাধিকার রয়েছে প্রাণিদের অধিকার রক্ষার জন্য তেমনি রয়েছে আমাদের প্রাধিকার। পৃথিবীকে মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য সকল প্রাণীর বসবাস উপযোগী করে তুলতে আপনাদের সকলের সাথে একযোগে কাজ করে যেতে চাই।
[মো. মাহাদী হাসান, সভাপতি, প্রাধিকার]
ফটোগ্রাফিক সোসাইটি
ফটোগ্রাফিক সোসাইটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। ছবি তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছবি তোলার আগ্রহকে ছড়িয়ে দিতে ২০১৬ সালে প্রথমবার ‘সেট আউট’ নামে একটি ছবি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম। পরে আরো তিনটি আসর অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফটোগ্রাফারদের প্রতিভাকে সামনে তুলে আনতে আমরা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো আর্ট অফ লাইট নামে ‘জাতীয় ছবি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিমকে কেন্দ্র করে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন ফটোগ্রাফারদের উৎসাহ প্রদান করা হয়, ছবি তোলার পরিবেশ তৈরি হয়। তাছাড়া দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ছবির মাধ্যমে ধারণ করা যায়। সংগঠন থেকে ফটোওয়াক, ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপসহ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ওয়েবসাইট তৈরি, নিউজ লেটার তৈরি, ডিজাইন চর্চা এবং পডকাস্ট তৈরি কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি।
[সানোয়ার হোসেন সুমন, প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি]
পাঠশালা একুশ
পাঠশালা একুশ বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ইশকুল একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা সিকৃবির শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কৃষি অনুষদের ৫ম ব্যাচের একদল স্বপ্নবাজ তরুণদের হাত ধরে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠনটি। আমাদের লক্ষ্য হল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা প্রদান করা এবং তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ক্লাস নিচ্ছি আমরা। বর্তমানে সংগঠনটিতে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত মোট প্রায় ১১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে যারা নিয়মিত ইশকুলে পাঠ গ্রহণ করে। প্রতি ক্লাসের পর টিফিন দেয়া হয়। প্রতি মাসে একবার করে হোম ভিজিট করা হয়। প্রতি বছর অন্তত একবার অভিভাবক সমাবেশ করা হয়। বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃ্তকি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শীতকালে শীতবস্ত্র এবং ইদ উপহার হিসেবে নতুন জামা দেয়া হয়। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমি এই সংগঠনের সাথে জড়িত আছি। পরিবার ছেড়ে এসে যেমন এই সংঠনের বড় ভাই ও আপুদের পরিবারের সদস্য হিসেবে পেয়েছি তেমনি পাঠশালা এর শিশুদের পড়ানোর মাঝে পেয়েছি প্রচুর আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি। ক্যাম্পাসের পাশেই শিশুদের বাসা। যখন সেই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করা হয় তখন তাদের মুখ থেকে ‘স্যার’ ডাক টা অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি জাগায়।
[মো. ওমর ফারুক, সভাপতি, পাঠশালা একুশ]
আইএএএস
ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ স্টুডেন্টস্ ইন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রিলেটেড সায়েন্সেস (আইএএএস) একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যার প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা। আমরা বাইরের দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকৃবির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ভর্তি পেতে সহায়তাসহ শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রজেক্ট ও রিসার্স কাজে ল্যাবে সহায়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সোশাল এক্টিভিস্ট সংগঠনে যুক্ত হতে সহায়তা করি। এছাড়া দেশের মধ্যে কৃষিভিত্তিক কোম্পানিতে সিকৃবি গ্রাজুয়েটদের চাকরির ক্ষেত্র পরিচিত করানো হয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ক পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলে আইএএএস।
[জেয়সির হাবিব অর্ক, লোকাল ডিরেক্টর, আইএএএস]
আইভিএসএ
ভেটেরিনারি এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (আইভিএসএ) একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগঠনটির প্রধান লক্ষ্য ভেটেরিনারি বা প্রাণীচিকিৎসায় অধ্যায়নরত সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং ভেটেরিনারি বা প্রাণীচিকিৎসায় উৎসাহীদের প্রাণীর উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধনে সফলভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া। বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস, বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসসহ ইত্যাদি দিবসে অণুজীব-বিরোধী প্রতিরোধ্যতা সচেতনতা তৈরিতে আমরা সিলেটের বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্পেইন করেছি। আমরা ক্যাম্পাসের আশেপাশের অবহেলিত প্রাণীদের খাবার দিই।
[শ্রাবন্তী বনিক, সভাপতি, আইভিএসএ]
মেট্রোনোম মিউজিক্যাল ক্লাব
মেট্রোনোম মিউজিক্যাল ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সংগঠন যারা শুধুমাত্র সংগীত নিয়ে কাজ করে। ব্যান্ড মিউজিককে প্রাধান্য দিয়ে সকল ধরণের সংগীত চর্চা এবং বাদ্যযন্ত্র চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে সংগঠনটি সাংস্কৃতিক চর্চা করে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেট্রোনোম মিউজিক্যাল ক্লবের তৃতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। এর পরপরই ২রা অক্টোবর সপ্তকের গান শীর্ষক একটি আনপ্লাগ্ড অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করে। মিট এভ্রি বিট (Meet Every Beat) শ্লোগানকে ধারণ করে সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি এগিয়ে যেতে চাই।
[ফারদিন শাহরিয়ার, সাধারণ সম্পাদক, মেট্রোনোম মিউজিক্যাল ক্লাব]
লুব্ধক থিয়েটার
‘লুব্ধক থিয়েটার’ নাট্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ‘সমাজকে দেখি, সমাজকে গড়ি’- এই প্রত্যয়কে ধারণ করে সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অবিচার ও শোষণের প্রতিচ্ছবি নাটকের মাধ্যমে মঞ্চে তুলে ধরছে। যুগযুগ ধরে চলা দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাটক মঞ্চায়নের মাধম্যে লুব্ধক থিয়েটার চালিয়ে যাচ্ছে এক নীরব আন্দোলন। এখন পর্যন্ত সংগঠনটি নাট্যকার সেলিম আল দীন রচিত ‘বাসন’, নাট্যকার আব্দুল্লাহ আল মামুন রচিত ‘এখনো ক্রীতদাস’ এবং নাট্যকার মান্নান হীরা রচিত ‘আগুনমুখা’ সহ মোট ৫টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে। নাট্যচর্চার মাধ্যমে সব ধরণের প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে লুব্ধক দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি সিকৃবিতে ভর্তি হই ২০১৮ সালে। লুব্ধকের সাথে আমার পথচলা শুরু হয় এস এম সোলায়মান রচিত পথ নাটক ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল’ এর মাধ্যমে। এখানে পেয়েছি সিনিয়র ভাই-বোনদের থেকে অকৃত্তিম ভালবাসা, স্নেহ আর মমতা।
[দেবাশীষ বিশ্বাস, সভাপতি, লুব্ধক থিয়েটার]
লেখক : ফয়সাল খলিলুর রহমান
উপপরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর
ফোকাল পয়েন্ট, ইনোভেশন ও ই-গভার্নেন্স কমিটি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়