সাত বছরে কত দূর এগোলো তাবেলা সিজার হত্যা মামলা

রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের বিচার সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তবে করোনা মহামারিকালে আদালতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় বিচার শেষ করতে পারেনি বলে দাবি তাদের। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, খুব দ্রুত রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। এ ঘটনায় একই দিন তার সহযোগী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আসাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলাটি একটি আলোচিত মামলা। এ মামলায় পুলিশের ৪ জন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। এ পর্যন্ত মামলায় মোট ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জেহাদ হোসেনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের জেরা শেষ হলে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও বিচারের সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের পর রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটি আরও আগে শেষ করা সম্ভব হতো যদি করোনায় মহামারি না থাকতো। করোনায় দুই বছরে আদালতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় বিচার খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। তবে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আশা করছি খুব দ্রুত রায় ঘোষণা হবে। রায়ে সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।’

এ হত্যা মামলার ২০১৬ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী সাত জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে একই বছরের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

অভিযোগপত্রে আসামিরা হলেন—বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুমসহ (কাইয়ুম কমিশনার) তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারী সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারী সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। এছাড়া, গ্রেফতারকৃত পাঁচ জনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি চার আসামিই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।’

এদিকে মামলার বিষয়ে আসামি আবদুল মতিনের আইনজীবী বলেন, ‘তাবেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামি মতিনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এ হত্যাকাণ্ডের পর আসামি মতিন দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। সেজন্য তার পরিবার থেকে একটি জিডিও করা হয়। নিখোঁজের পর তাকে মামলাটিতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলায় কোনও সাক্ষী মতিনের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেননি। আমরা আশা করছি এ মামলা থেকে আসামি মতিন খালাস পাবেন।’