চাঁদাবাজদের হয়ে কাজ করছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার চারখাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফয়সল আহমদ। এলাকার চিহ্নিত একটি চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তদন্তের নামে ১৫ আসামির ১৪ জনকেই বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তিনি। সেই রিপোর্ট প্রত্যাখান করে আদালতে নারাজি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের জমশেদ আলীর ছেলে জয়নাল উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা নিচু হওয়ায় আমি দুই লাখ টাকা খরচ করে ৫ ফুট চওড়া ও ৫০ ফুট দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে নিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন একই গ্রামের মৃত মঈন উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আলিম ভাসানি। সে এলাকার ত্রাস ‘ভাসানী গ্রুপে’র প্রধান। এসময় তার প্রধান সহযোগী সাজন আমার বুকে ডেগার ঠেকিয়ে ১০ দিনের মধ্যে দুই লাখ টাকা না দিলে খুনের হুমকি দেয়।
জয়নাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বিদের জানালে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আব্দুল আলিম ও তার সহযোগী একই গ্রামের মৃত তজমুল আলীর ছেলে মাজু, সাজু, তারেক আহমদ, বচন, রাজু ও সাজন, মৃত মদরিছ আলীর ছেলে কামাল জামাল বাবলা ও রাজন, আব্দুল আলীর ছেলে নাসির, মক্তার আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর, মজির উদ্দিনের ছেলে মঈনুল, দাহাল গ্রামের তকু মিয়ার ছেলে সাজেদ ও মুসন মিয়ার ছেলে বলাই দা, ডেগার, কোদাল, খুন্তিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার তৈরি রাস্তার মাটি কাটতে শুরু করে। আমি বাধা দিলে তারা আমাকে মারধর করে। আমি মারাত্মক জখম হই। আমার স্ত্রী সায়মা আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তার ওপরও হামলা হয়। এমনকি তার কাপড়-চোপড় টেনে ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করা হয়। তারা আমার তৈরি রাস্তার মাটি খুঁড়ে ফেলে দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে আমাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গত ৩ মার্চ আমি নিজে বাদী হয়ে ভাসানী গ্রুপের প্রধান আব্দুল আলিম ও তার ১৪ জন সহযোগীকে আসামি করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৪ বিয়ানীবাজার সিলেটে একটি মামলা দায়ের করি (নং ৮৩/২০২২)। আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় চারখাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফয়সল আহমদকে। কিন্তু তিনি আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি জালালনগর গ্রামের আসাব আলীর ছেলে আব্দুর রহিম ও সাহাবুদ্দিনের সাথে বিরোধ দেখিয়ে আসামিদের কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা লাভের মাধ্যমে ঘটনাস্থল পরিদর্শন বা মেডিকেলের কাগজপত্র না দেখে এবং স্বাক্ষীদের কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের নাম বাদ দিয়ে গত ১২ অক্টোবর আদালতে একটি সাজানো প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমি বুধবার (২ নভেম্বর) নারাজি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সাজু ও বচন ডাকাতি মামলায় ১০ বছর সাজা ভোগ করেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জয়নাল উদ্দিন জানান, আসামিরা এলাকায় কেউ নতুন একটি গাড়ি কিনলেও তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে।
জয়নাল তার কাছে চাঁদা দাবি এবং মিথ্যা বানোয়াট প্রতিবেদন দাখিল করায় এসআই ফয়সল আহমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জয়নাল উদ্দিনের ছেলে সায়েফ আহমদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তার বন্ধু আশুক উদ্দিন।