সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৪ বছর পূর্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনী ২০২৩ সম্পন্ন হয়েছে। তিন দিনব্যাপী মহোৎসবের বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে দিনভর ছিল অগ্রজ-অনুজদের মিলনমেলা।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত পুনর্মিলনীতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমকালো আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় অংশগ্রহণকারী এবং এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
শনিবার (৪ মার্চ) মহোৎসবের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদেরও চাকরির নিশ্চয়তা নেই। এই বাস্তবতা পৃথিবীর সবদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পাঠ্যপুস্তক নির্ভর শিক্ষা এখন সার্টিফিকেট অর্জনের নামমাত্র। শিক্ষার্থীদের কর্ম উপযোগী করার জন্য প্রায়োগিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সবাইকে নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দক্ষতানির্ভর শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতাত্তোর সময়ে তিনি সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা। যার ফলশ্রুতিতে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে।’
সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমের প্রশংসার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেন তিনি।
সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় পুনর্মিলনী উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার উন্নয়ন হলে আজকের শিক্ষার্থীরা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলোকে শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারবে। একইসাথে মূল্যবোধ রক্ষা করে তাদের মানব উন্নয়নে আগ্রহী করে তুলতে হবে। বর্তমান প্রজন্ম জ্ঞান ও দক্ষতায় পূর্ণ হলে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ আরও সমৃদ্ধ হবে।’
পুনর্মিলনী উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব সৈয়দ জুবায়ের আহমদের পরিচালনায় এদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মানিক, যুক্তরাজ্যের কেমডেন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র নাজমা রহমান, বিশিষ্ট ব্যাংকার সমর উদ্দিন মানিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান, বিশিষ্ট শিল্পপতি আতাউল্লাহ সাকের, দৈনিক সিলেটের ডাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সালমা বেগম। এছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ , শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছরে আয়োজিত প্রথম মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে। খুঁঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রিয় বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনীতে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল আলোকসজ্জায়। নানা বয়সের প্রাক্তনদের আবেগ যেন একটু বেশিই ছিল। তাদের আবেগ-স্মৃতিচারণ-আড্ডা ছুঁয়ে যায় বিদ্যালয় মাঠ। দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনারের সামনে ছবি তুলে তৃপ্ত অনেকে। দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু, সতীর্থ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পেয়ে প্রাণ জুড়িয়ে শেষ হয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৪ বছর পূর্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনী ২০২৩ মহোৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হয়। তিন দিনব্যাপী মহোৎসবের আয়োজনে ছিল শিক্ষক সম্মাননা, স্মৃতিচারণা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোজ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, র্যাফেল ড্র ও আতশবাজি। আনন্দঘন পরিবেশে পুনর্মিলনী উৎসব সফল করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে পুনর্মিলনী উদযাপন পর্ষদ।