সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ের গাছ কেটে ফেলার অভিযোগে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ফয়েজুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন গ্রামবাসী।
বিষয়টি সুষ্টুভাবে তদন্ত করার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপরই গতকাল শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম ওই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষককে উক্ত বিদ্যালয় থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এতে ওই স্কুলকে বিভিন্ন অনিয়ম থেকে রক্ষার্থে গ্রামবাসীর মধ্যে অনেক স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই শিক্ষক সরকারি চাকরি করার পরেও নিয়মনীতির বাহিরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত এবং উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. অবনী মোহন দাশের অনুসারী, ওই শিক্ষকের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক মিটিংয়ের বেশ কয়েকটি ছবিও অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করেন তারা।
অভিযোগে তারা আরো উল্লেখ করেন, গত ৫ তারিখে সরকার পতনের পর থেকেই তিনি স্কুলে অনুপস্থিত হতে থাকেন এবং গত ২৯ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ছুটি ছাড়াই স্কুল ত্যাগ করে অনুপস্থিত হয়ে গা-ঢাকা দেন তিনি। বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেও ফিরে যান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বোন জামাই হওয়ার সুবাদে স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি একক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করেন। এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে স্কুলের সবক’টি গাছ কেটে বিক্রি করে দেন তিনি।
এর আগে, এই বিদ্যালয়টি বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত থাকায় বিদ্যালয়টি সংস্কারের উদ্যােগ নেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। কিন্তু তাদের অভিযোগ ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত ধরে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী কোন আলোচনা সুযোগ পায়নি। পরে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর উদ্যােগে ওই স্কুলে পরিষ্কার অভিযান চালান তারা।
এসব অভিযোগের ব্যাাপরে জানতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীর মুঠোফোনে বারবার কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই এলাকার ছাত্র-জনতার অভিযোগের পরিপেক্ষিতে আমি এই স্কুলে এসেছি। বাস্তবেই এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও পরিবেশ ভাল না। এখানে প্রধান শিক্ষকের যে অনিয়ম রয়েছে এটার প্রমাণ আমি পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও আমি অবহিত করেছি। ফলে ফয়েজুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীকে এই স্কুল থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
আগামীকাল থেকে ওই শিক্ষক এই স্কুলে আর প্রবেশ করতে পারবেন না এবং বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপস্থিত গ্রামবাসীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘এই এলাকার মানুষ শিক্ষানুরাগী, অনেক ও আন্তরিক সচেতন এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি। সারা দেশের ন্যায় শাল্লার সব-কটি স্কুলও সংস্কার করা হবে।’