সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদ রমজুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ছাত্রীর অভিভাবক।
গেল ২১ জুন বুধবার জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (তত্ত্ব ও প্রযুক্তি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএমসি সভাপতি ও বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা ট্যাব বঞ্চিত শিক্ষার্থী ইমা আক্তারের মা আনোয়ারা বেগম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ১-৩ নং ক্রমিকধারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরুপ ট্যাব বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদ রমজুদ একক ক্ষমতাবলে ১ ও ৩ নং রোল ক্রমিকধারীদের নাম তালিকাভুক্ত না করে ৪ ও ১৫ নং রোল ক্রমিকধারী শিক্ষার্থী নিজের ছেলে ও নাতিনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে ট্যাব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন মেধাবী শিক্ষার্থী ইমা আক্তার ও দিলশাদ মিয়া। যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিপন্থী।
অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির পরপরই প্রধান শিক্ষকসহ ৬টি পদে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এখানেও স্থানীয় উক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক মোনতাসির আহমেদ রমজুদ অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পরিছন্নতাকর্মী হিসেবে ৫ম শ্রেণি পাশ ৪২ বছরের বয়স্ক একজন লোককে নিয়োগ পাইয়ে দেন। যেখানে রমজুদ নিজেই কাদিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্যাড ও সিলমোহর বানিয়ে একটি ভূয়া ৮ম শ্রেণির সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে ৪২ বছরের জুয়েল আহমেদকে সুহেল আহমেদ বানিয়ে বয়স ৩৩ বছর দেখান। পাশাপাশি একই নিয়োগ কাঠামোতে উক্ত রমজুদ মিয়া তার কাছের সম্পর্কের ভাগ্নে কয়েছ মিয়াকে নিরাপত্তাকর্মী ও পূর্ববতী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রতন বৈষ্ণবের পুত্রবধূ কামনা রানী বৈষ্ণবকে আয়া পদে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ পাইয়ে দেন।
শুধু তাই নয়, মুনতাসীর আহমেদ রমজুদ ইতিপূর্বেই ৯০’র দশকে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী (রেজি:) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকায় অবস্থায় অবৈধ নারী কেলেঙ্কারির জন্য চাকরিচ্যুত হন।
অভিযোগে বলা হয়, রমজুদ মাস্টারের হীন চরিত্রের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সর্বদা সন্ত্রস্ত্র থাকে। ফলে লেখাপড়ার প্রকৃত পরিবেশ প্রায় ধ্বংসের পথে। রমজুদ মাস্টারের মত লোক একটি স্বনামধন্য ও এলাকার একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধিষ্ঠিত থাকলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ধ্বংস হতে বেশিদিন লাগবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানা যায়, এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেবের নির্দেশনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং জুয়েল মিয়ার এমপিও’র আবেদনের সুপারিশটি ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে ট্যাব না পাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত ধরে মানসিক অশান্তিতে ভুগছে।
এই স্কুলের প্রত্যেকটি বিষয়ে রমজুদ মাস্টার নেতৃত্ব দেয় উল্লেখ করে তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা খণ্ডকালীন শিক্ষক রমজুদ মাস্টারের অপসারণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিতোষ চন্দ্র দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত মুনতাসীর আহমেদ রমজুদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, অভিযোগ পাওার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।