শাল্লায় ইংরেজি শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে সীমান্ত’র ই-প্ল্যানেট

৪টি ইউনিয়ন ও ৩৬ টি ওয়ার্ড নিয়ে ছোট্ট দ্বীপের মত একটি উপজেলা শাল্লা। জেলা শহর শহর থেকে শাল্লায় সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্হা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন! দেশের উন্নয়নের স্বাভাবিক গতি থেকে পিছিয়ে থাকা দুর্গম এই অঞ্চলের আঁধার তাড়াতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ই-প্ল্যানেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শাল্লায় শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল-পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন অনেক অভিভাবক। শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পথে পা ফেলতে শুরু করেছে এখানকার শতাধিক শিক্ষার্থী।

শাল্লা উপজেলায় আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই নাজুক হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে অনেক সুনাম খুড়িয়েছে এই উপজেলাটি।

তেমনই একজন স্মার্ট তরুণ, শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সীমান্ত তালুকদার সুমন প্রত্যন্ত এই হাওরাঞ্চলে নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ই-প্ল্যানেট নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করা হচ্ছে।

শাল্লা সদরস্হ ডুমড়া মিশন রোডে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা চলতি বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৪র্থ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ১১০ জন। অল্প দিনেই ইংরেজি শিক্ষায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সুনাম সৃষ্টি করে ফেলেছে সীমান্ত তালুকদারের ই-প্ল্যানেট প্রতিষ্ঠানটি। এবং এর সুনাম দিনদিন বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অনেক অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানটির ফাউন্ডার সিইও সীমান্ত তালুকদার সুমন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একটি ডায়াস ও বিভিন্ন স্থিরচিত্র দিয়ে নানাভাবে ই-প্ল্যানেটের অফিসটি সাজিয়েছেন তিনি। ই-প্ল্যানেটের অফিসের ভেতরের পরিবেশটি খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। ডায়াসের সামনে দাড়িয়ে অনর্গল ইংরেজি ভাষায় চর্চা করতে দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থীকে। বিভিন্ন রঙে সাজানো গোছানো পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে অজান্তেই মনের গহিনে ভাল ও সুন্দর চিন্তার উদ্ভব ঘটে বলেই জানান অভিভাবক ও সেখানকার শিক্ষার্থীরা।

এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এলাকায়।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সীমান্ত তালুকদার সুমন ব্যক্তিগত ব্যয়ভার নিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার অসহায় গরীব মানুষের জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অকাতরে দুস্থ মানুষকে বিভিন্নভাবে করে যাচ্ছেন সাহায্য সহযোগিতা।

শুধু তাই নয় তিনি নিজে মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্ত দেওয়াসহ একজন সমাজকর্মী হিসেবেও তৎপর আছেন এলাকায়। এছাড়াও বাইশের বন্যা ও বিভিন্ন সময়ে হত দরিদ্রদের মাঝে,শীতবস্ত্র, ত্রাণ বিতরণসহ নানা কার্যক্রম করতে দেখা গেছে তাকে।

অভিভাবক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড: দিপু রঞ্জন দাস বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষক সীমান্ত তালুকদার সুমনের এরকম একটি উদ্যােগকে আমি প্রথমেই স্বাগত জানিয়েছি। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষায় তার (সীমান্ত’র) ই-প্ল্যানেট প্রতিষ্ঠানটি অল্প দিনেই এলাকায় বেশ সুনাম খুড়িয়েছে। আমি চাই প্রত্যেকটি শিক্ষকের মনে এরকম পরিবেশ তৈরি হউক। এতে দেশ ও জাতি অনেক উপকৃত হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ই-প্ল্যানেটের প্রতিষ্ঠাতা ও ফাউন্ডার সিইও সীমান্ত তালুকদার সুমন বলেন ই-প্ল্যানেটে প্রতিদিন সকাল ৬:৩০ থেকে ৮:৪০ মিনিট ও বিকাল ৪:৩০ থেকে কোনো দিন ৬:৩০ কোনোদিন ৫:৩০ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ইংরেজি ভাষার কোনো বিকল্প নেই৷ সরকারি/বেসরকারি চাকরি, দেশ কিংবা বিদেশের ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কিংবা ভর্তির ক্ষেত্রে ইংরেজি জানাটা এখন খুবই জরুরি। সব চাইতে বড় কথা হলো কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ইংরেজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে চারটি ধাপ পেরুতে হয়। সেই চারটি ধাপ হলো শোনা, বলা, পড়া এবং লেখা। আমি সেগুলো নিয়েই কাজ করছি। শাল্লা আমার জন্মভূমি। আমি চাই শাল্লার ছাত্রছাত্রীরা অনেক ভালো জায়গায় অবস্থান তৈরি করে শাল্লা তথা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। আর সর্বশেষে আমি যেটা মনে ধারণ করি সেটা হলো ভালো ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়াটাও জরুরি। আমি তাদেরকে সেই শিক্ষাটাও দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এদিকে সীমান্ত তালুকদার সুমনের ই-প্ল্যানেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার কার্যক্রমে আরো তিনজন শিক্ষক পাঠদান করে আসছেন। তারা হলেন ভোলানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজীব চৌধুরী, উজান যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বর্ণালি মজুমদার স্বর্ণা ও গঙ্গানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিংকন দাস।