শহরের সব সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধার অঙ্গিকার নিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামকে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম।
এই গ্রামেই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির পৈত্রিক ভিটায় নিমার্ণ করা হচ্ছে মন্ত্রীর মায়ের নামানুসারে আজিজুন নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট। উপজেলা সদর শান্তিগঞ্জ থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে সিলেট বিভাগের একমাত্র মডেল এই গ্রামের অবস্থান।
তবে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রামের একমাত্র সড়ক শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ রাস্তাটির বেহাল দশায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই সড়কে দিয়ে চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রামের মানুষসহ পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের বড়মোহা, জয়সিদ্ধি, নোয়াগাঁও, বনোয়া, করেরগাঁও, দুবার্কান্দা, মৌখলা, উলারভিটা, শান্তিপুর, বীরগাঁও ইউনিয়নের ধলমৈশা, হাঁসকুড়ি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের প্রধান যাতায়াত পথ শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়ক। গেল বছরের (২০২২ সাল) ভয়াবহ বন্যায় শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়কের শান্তিগঞ্জ থেকে ডুংরিয়া বাজার হয়ে গ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্তু প্রায় সাড়ে ৩ কি.মি সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পুরো সড়কের উপরের কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে যাতায়াতে চরম দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে এই সড়ক ব্যবহারকারী লক্ষাধিক মানুষের। আর সংস্কারে কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় দিন দিন সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ থেকে বিভিন্ন গ্রামের যাত্রী নিয়ে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও সিএনজি চালিত ৩ চাকার যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়ক।
শান্তিগঞ্জ থেকে ডুংরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত সড়ক মারাত্মকভাবে ভাঙ্গাচুরা। সড়কের ডুংরিয়া বাজারের পর থেকে ডুংরিয়া মডেল গ্রামের একেবারে দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত একই অবস্থা। ডুংরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই এই সড়ক ব্যবহার করে বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াত করেন। এছাড়াও ডুংরিয়া গ্রামকে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম করায় প্রতিনিয়িত এই সড়কে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতার্রাও আসেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির পৈত্রিক ভিটায় আজিজুন নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট নিমার্ণ করা হচ্ছে। এই স্থাপনা নির্মানের সকল পণ্যই পরিবহন করা হয় এই সড়ক দিয়েই।
ডুংরিয়া গ্রামের সিএনজি চালক মো. আলবাব মিয়া জানান, সড়কটি গতবছরের বন্যায় মারাত্মকভাবে ভেঙে যায়। এখন সড়কে চলাচল করতে ভয় হয়। আমি এই সড়কে এখন লোকাল যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাই না। রিজার্ভ ট্রিপ পেলে তখন গাড়ি নিয়ে যাই। এই সড়কে গাড়ি চালালে ঝাঁকুনিকে কোমর ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা জমে যায়, গাড়ির ক্ষতি হয়, যাত্রীরও ভোগান্তি সইতে হয়।
ডুংরিয়া গ্রামের অটোরিক্সা চালক মোস্তাকিন মিয়া জানান, আমি খুব কষ্ট করে এই সড়কে গাড়ি চালাই। অনেক খারাপ সড়ক, পুরোটাই ভাঙা। এজন্য প্রতি মাসেই আমার গাড়িতে কাজ করাতে হয়ে। ২-৩ মাস পরপরই ব্যাটারী পাল্টাতে হয়। ভাঙা সড়কের ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি আমাদের গাড়িরও ক্ষতি হয়। পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে গাড়ি চালাই।
ডুংরিয়া শিবপুর গ্রামের বায়োজেষ্ঠ মুরব্বি মাসুক মিয়া জানান, আমরা খুব কষ্ট করে সড়কে যাতায়াত করি। অসুস্থ্য মানুষ আমি, নানা প্রয়োজনে শান্তিগঞ্জে আসতে হয়। গাড়িতে উঠলেই ঝাঁকুনিতে অসুস্থতা বেড়ে যায়। আমরা চাই এই সড়কটি যেন দ্রুত মেরামত করা হয়।
এব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি প্রকৌশলী আল নুর তারেক জানান, শান্তিগঞ্জ-রজনীগঞ্জ সড়কের শান্তিগঞ্জ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিমি সড়ক ২০২২ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছরে আমরা শান্তিগঞ্জ বাজার থেকে ডুংরিয়া স্কুল এন্ড কলেজের পাশের কালভার্ট পর্যন্ত আড়াই কি.মি সড়কের প্রাক্কলন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ডুংরিয়া বাজারের পর থেকে বাকি অংশের কাজ চলতি কাজের সাথে ধরা আছে। আশা করি মন্ত্রণালয় থেকে খুব শীঘ্রই রাস্তা নির্মানকাজের অনুমোদন দেবেন।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম