সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় লোডশেডিং তীব্র আকার ধারন করেছে। প্রচন্ড তাপদাহে লোডশেডিংয়ের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ক’দিন আগেও এই উপজেলায় বিদ্যুৎসেবা অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে এলাকাভেদে গড়ে ১২-১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়ায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গেল আগষ্ট মাসে ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। তাদের দাবি, বিগত যেকোনো মাসের চেয়ে আগষ্ট মাসে দুই থেকে তিনগুণ বেশি বিল এসেছে। বিদ্যুতের এমন অস্বাভাবিক বিলকে স্বেচ্ছাচারিতা বলছেন ভোক্তভোগী গ্রাহকরা।
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করার কথাও বলছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করায় চরম বিপাকে শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। শরতের প্রচণ্ড তাপদাহে বিদ্যুতহীনতার কারণে দিনের বেলায় স্কুলে ফ্যান চালানো যায় না। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে উঠেন স্কুল-কলেজ গামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও কাজ করতে পারছেন না পেশাজীবিরা। কবে শেষ হবে বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারীতা শান্তিগঞ্জবাসীর মনে এখন এমনই প্রশ্ন।
উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের দলিল লেখক ছালিক আহমদ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে ঘেমে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের শুরুটাই হয় অস্বস্তির মধ্য দিয়ে। সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার বিদ্যুতের দেখা মিললেও তা আধাঘণ্টা বা সর্বোচ্চ একঘন্টার জন্য। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ আবার চলে যায়। বলতে গেলে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকেই না বরং মাঝে মধ্যে ক্ষণিকের জন্য আসে। আমরা বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজিতে চূড়ান্ত রকমের অতিষ্ট। এই দুর্ভোগের ইতি টানতে এখন প্রয়োজন লংমার্চ টু বিদ্যুৎ অফিস।’
পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের চিকারকান্দি গ্রামের সুহেল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যু অফিস আমাদের সাথে ফাজলামি শুরু করেছে, বার বার বিদ্যুৎ নেবে আর দেবে। এমন স্বেচ্ছাচারীতার প্রতিবাদে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করা দরকার।’
পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনাছ আলী বলেন, ‘স্কুলে গেলে বিদ্যুৎ থাকে না, বাসায় আসলেও বিদ্যুৎ পাই না। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। গরমে আন ঘামে সবার শরীর দুর্বল থাকে সব সময়। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসলেও আধা ঘন্টা পর আবার চলে যায়। সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসলেও লোডশেডিংয়ের কারণে পড়া সম্পন্ন হয় না। আমরা এর পরিত্রান চাই।’
পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী নাসির আহমদ বলেন, ‘সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। আমার ব্যবসা পুরোটাই বিদ্যুৎনির্ভর। ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যানার-ফ্যাস্টুন প্রিন্টের মেশিন কিনেছি। মাসিক কিস্তির চিন্তা মাথায় সবসময়। কিন্তু পল্লীবিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ করা যায় না। ফলে ইনকামও কম হয়। এভাবে চলতে থাকলে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবো।’
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সহকারি জেনারেল ম্যানাজার (এজিএম) ইয়াসিন মাহমুদ ইমরান, ‘লোডশেডিং একটি জাতীয় সমস্যা। আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৫.৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ২ মেগাওয়াট। প্রতিনিয়ত ৩. ৫ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও জোনাল অফিসে আবেদন করেছি আমাদের এখানে মেগাওয়াট বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। আশা করছি এর সমাধান হবে।’
অস্বাভাবিক বিলের ব্যাপারে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গরমে বিদ্যুত ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে, তাই বিলও বেশি এসেছে। বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার হলে বিদ্যুতের দামের শ্রেণীও পরিবর্তন হয়। এ কারণে বিল বেশি এসেছে হয়তো। তবে গ্রাহকরা মিটারে রিডার চেক করলেই বুঝতে পারবেন আমরা বাড়তি কোনো বিল লিখি নি। ‘