আহসান হাবিব বিভিন্ন সময় সার্কিটসহ রোবটের তৈরি জিনিসপত্র কিনতেন। এসব দেখে প্রতিবেশীরা হাবিবকে অনেকটাই পাগল ভাবতেন। সেই আহসান হাবিব দুই বছর গবেষণা শেষে তৈরি করেছেন রোবট। ওই রোবট বাংলা ও ইংরেজিতে কোনো প্রশ্ন করলে যেমন উত্তর দিতে পারে তেমনি সামনে ও পেছনে হাঁটতেও পারে। শুধু তা-ই নয়, হাবিবের রোবট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপির নাম বলতে পারে। এ ছাড়া হাত দিয়ে ভারী জিনিসপত্র বহন করতে পারবে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে পারবে। এখন হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। সবাই তাকে ধন্যবাদও জানাচ্ছেন।
তরুণ গবেষক আহসান হাবিবের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই তার চিন্তা এমন কিছু বানাবেন, যা দিয়ে বিশ্বের বুকে নিজ দেশকে পরিচিত করে তুলবেন। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে মাথায় আসে রোবট তৈরি করার। সেটি কাজ করবে ‘রেস্টুরেন্ট’-এ। কিন্তু তার হাতে নেই সে পরিমাণ টাকা। ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে অর্থসহায়তা করেন মা খালেদা বেগম।
হাবিব কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় পড়েন। তার বাবা মৃত মজু মিয়া। পরিবারের দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে হাবিব ছোট।
ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে এলাকায়। হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও রোবট তৈরি করেছেন, এ জন্য তাকে সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছেন। যদিও আর্থিক সংকটের কারণে এখনো রোবটের পুরো কাজ শেষ হয়নি। টাকার ব্যবস্থা হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে উন্মুক্ত করতে পারবেন বলে জানান হাবিব।
জানা গেছে, হাবিব ছোট থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী। তাকে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গর্ব করতেন। ছোটবেলা থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকতেন। আহসান হাবিব অভাবী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া হয়নি। ২০১৭ সালের দিকে তুষভান্ডার আরএমএমপি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিদ্যালয় তহবিলের টাকায় কাঠ দিয়ে একটি রোবট তৈরি করেন হাবিব। ওই সময় লালমনিরহাট জেলা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় রোবটটি নিয়ে অংশ নিলে তিনি প্রথম হন। এরপরই তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
তরুণ গবেষক আহসান হাবিব বলেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করতেই আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টা। আমার এ কাজে সাহস জুগিয়েছেন আমার মা ও বড় ভাই। রোবটটি রেস্টুরেন্টে কাজ করার উপযোগী করে বানিয়েছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, ভারী খাবার বহন করবে। এ ছাড়া যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেবে। যদিও এখনো আমি রোবটটির পুরোপুরি কাজ শেষ করেনি। অর্থের কারণে কাজ এখন বন্ধ রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, যে টাকা আয় করি, সেটি দিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আশা করছি দ্রুত মানুষের কাছে রোবটি উন্মুক্ত করতে পারব। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ দেশবাসীর কাছে আমি সহযোগিতা চাই।
প্রতিবেশীরা জানান, হাবিব যখন রোবট তৈরির কাজ শুরু করেন, তখন তারা ভেবেছিলেন মা-বাবার কাছে টাকা নষ্ট করছেন। কিন্তু এখন তার সফলতা দেখে তাদের ভুল ভেঙেছে। এলাকাবাসী এখন হাবিবকে নিয়ে গর্ব করছেন। তারা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে হাবিবকে সহযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হোক। জাতীয় পর্যায়ে রোবটটি প্রদর্শন করার অনুমতি দেওয়া হোক। তাহলে হাবিবের মতো মেধাবীরা একদিন ভালো কাজের মূল্যায়ন পাবেন।
আহসান হাবিবের মা খালেদা বেগম বলেন, হাবিবের বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার তাদের দুই ভাইয়ের ওপর পড়ে। এরপরও সারা দিনের ক্লান্তি শেষে তার চিন্তাভাবনা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। সেই পরিশ্রমের পর আজ সে রোবট তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছে। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। দোয়া করি হাবিব অনেক বড় হোক।
কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের শিক্ষক ইমান আলী জানান, আহসান হাবিব অনেক মেধাবী ছিল। কিন্তু অভাবের কারণে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়াশোনা করতে পারেনি। সেটা পারলে হয়তো দেশের নাম উজ্জ্বল করত। দেশবাসীসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কমনা করেন তিনি।