বিজিবি ও থানা পুলিশের নজরদারির পরও সিলেটের কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পড়ে থাকা জব্দকৃত পাথর গভীর রাতে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে কতিপয় দৃর্বৃত্ত।
লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর মুলাগুল এলাকার বেশ কিছু লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় মাসখানেক ধরে বিজিবি ও থানা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন রাত ৩ টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কোয়ারীর ভাল্লুকমারা, সতিপুর সহ বিভিন্ন স্থানে রাখা কোয়ারীর জব্দকৃত পাথর ১০/১২টি ট্র্যাক্টর গাড়ী দিয়ে মমতাজগঞ্জ বাজারের আশপাশ এলাকা এবং বারকি নৌকা দিয়ে লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন ও সাতবাঁক ইউনিয়নের মধ্যস্থল সুরমা নদীর আন্দুরমুখ ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চোরাইকৃত পাথর পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে।
আমদানীকৃত পাথর এর দাম উর্ধ্বমুখী থাকায় স্থানীয় লোকজন ঘরবাড়ি সহ ঢালাই এর কাজে লোভা কোয়ারীর পাথর ব্যবহার করে থাকেন। যার কারনে লোভাছড়া কোয়ারীর পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিজিবি ও পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে মুলাগুল এলাকার কিছু লোকজন ও দু’একজন জনপ্রতিনিধি জব্দকৃত পাথর রাতের আঁধারে চুরি করে সরিয়ে নিয়ে বিক্রি করে আসছে। সম্প্রতি থানা পুলিশ কোয়ারী থেকে রাতের আঁধারে জব্দকৃত পাথর বোঝাই একটি ট্র্যাক্টর আটকও করে।
গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে সাতবাঁক ইউনিয়নের দলইমাটি পাকা সড়কের পাশে স্থানীয় ইউপি সদস্য মঈনুল হকের একটি ক্রাশার মেশিনের সাইটে গিয়ে দেখা যায় লোভাছড়া কোয়ারীর পাথর ভর্তি ৩ টি ট্র্যাক্টর সেখানে রয়েছে। গণমাধম্যকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে দু’টি পাথর বোঝাই ট্র্যাক্টর সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১টি ট্র্যাক্টর পাথর ভর্তি অবস্থায় পাওয়া যায়।
বিষয়টি কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদকে অবহিত করা হলে, তিনি এস.আই দেবাশীষ শর্মাকে পাঠান। কিন্তু এস.আই দেবাশীষ শর্মা সেখানে গিয়ে পাথর বোঝাই ট্র্যাক্টরটি না পেলেও ক্রাশার মেশিনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোভাছড়া কোয়ারীর কিছু পাথর দেখতে পান।
এ ব্যাপারে এস.আই দেবাশীষ শর্মার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইউপি সদস্য মঈনুল হকের ক্রাশার মেশিনের সাইটে গিয়ে তিনি কোন পাথর বোঝাই ট্র্যাক্টর পাননি। তবে তিনি ক্রাশার মেশিনের সাইটে ছোট বড় বিভিন্ন আকারের লোভাছড়া কোয়ারীর পাথর দেখতে পেয়ে ইউপি সদস্য মঈনুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পাথরগুলো অনেক আগের রাখা বলে জানান।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মঈনুল হক লোভাছড়া কোয়ারীর একজন পাথর ব্যবসায়ী। তার কয়েকটি ট্র্যাক্টর রয়েছে। কোয়ারী সহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা পাথর ভাঙার সকল ক্রাশার মেশিন লোভাছড়া পাথর কোয়ারী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও একমাত্র ইউপি সদস্য মঈনুল হকের ক্রাশার মেশিনটি সচল রয়েছে। কয়েক মাস থেকে গভীর রাতে লোভা কোয়ারীর পাথর ট্র্যাক্টর দিয়ে এনে মঈনুল হকের ক্রাশার মেশিনে ভেঙে রাতের মধ্যেই অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে লোভাছড়া কোয়ারীর জব্দকৃত পাথর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা থানার এএসআই এনামুল হক এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সব-সময় জব্দকৃত পাথরগুলো পাহারা দিয়ে আসছি। দুর্গম এলাকায় জব্দকৃত পাথরগুলো থাকার কারনে দায়িত্ব পালনে বেগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও যখনই সংবাদ পাচ্ছি পাথর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সচেতন মহল পাচার রোধে দীর্ঘদিন থেকে লোভা কোয়ারীর দুই পারে পড়ে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জব্দকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর সরকারি ভাবে নিলামে বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের দাবী জানিয়ে আসছেন।