বর্তমানে অন্যান্য দেশের নারীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনলাইন ব্যবসা প্রবর্তনের ফলে নারীরা সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে সব পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।
তেমনি একজন কুমিল্লা জেলার মেয়ে মাহবুবা রহমান। তিনি কাজ করছেন কুমিল্লার বিখ্যাত হাতে বুনা খাদি কাপড়, বেডশিট, থ্রি-পিস, সুতি ও সিল্ক শাড়ি, সিলেটের বিখ্যাত মণিপুরি শাড়িসহ দেশীয় বিভিন্ন কাপড় নিয়ে।
মাহবুবা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্নাতক করেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে।
অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার একটা আগ্রহ তৈরি হয় মাহবুবার। সে আগ্রহ থেকেই তাঁত ও তাঁতি খুঁজে বের করেন। হুট করেই মহামারি করোনা চলে আসে। করোনাকালে লকডাউনে গৃহবন্দি তাঁতিদের দিয়ে শাড়ি তৈরি করা শুরু করেন। ‘দেশী কারিগর’ নামে ফেসবুক পেজে শাড়ির ছবি তুলে শেয়ার দিতেন। লকডাউনের সময়ে মানুষজন পছন্দের শাড়ি তার পেজ থেকে অর্ডার করতেন। এভাবেই শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মাহবুবা বলেন, দেশীয় ড্রেস পরতে পছন্দ করতাম। বেশিভাগ সময় দেশীয় ব্র্যান্ডের শো-রুমে গেলেই দেখতাম আমাদের দেশীয় ড্রেস। আবার আমি নিজে কাপড় কিনে সেই কাপড় নিজের পছন্দমতো ডিজাইন দিয়ে নতুন ড্রেস তৈরি করে পরতাম। এর থেকে মাথায় আসে আমি নিজেও হারিয়ে যাওয়া তাঁত নিয়ে নিজের একটা ব্র্যান্ড বানাতে পারি এবং নিজের দেশের বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এমন তাঁতগুলো নিয়ে কাজ করতে পারি। সেই থেকে তাঁতি খুঁজে বের করা শুরু করলাম। করোনায় যেখানে সবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে আমি আমার তাঁতির কাজ সচল রাখি। তাঁতিরাও ঘরে বসে উপার্জন করা শুরু করেন। আমিও ঘরে বসেই আমার ফেসবুক পেজ সামলাতে শুরু করি। একটু-আধটু করে ক্রেতারা ভরসা করা শুরু করলেন। অনেক ক্রেতাই আমার নিয়মিত ক্রেতা হয়ে যান।
তিনি বলেন, দেশীয় সকল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। এর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লার বিখ্যাত হাতে বোনা খাদি কাপড়। এই কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি, কুর্তি, ড্রেস নিজের পছন্দের ডিজাইন দিয়ে তৈরি করি। কুমিল্লার বিখ্যাত মোম বাটিকের বেডশিট, থ্রি-পিস, সুতি ও সিল্ক শাড়ি নিয়ে কাজ করি। সিলেটের বিখ্যাত হাতে বোনা মণিপুরি শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, গামছাও আছে দেশী কারিগরে। হাতে বোনা জামদানি শাড়ি এবং পাঞ্জাবিও রয়েছে। যেকোনো রঙের মণিপুরি শাড়ি এবং জামদানি শাড়ি ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজ করে তৈরি করে দিয়ে থাকি।
শুরুর দিকে নারীরা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবা বলেন, প্রতিবন্ধকতা তেমন একটা ছিল না। আমার পরিবার আমাকে সবসময় সাহায্য, সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছে। বিশেষ করে আমার আম্মু আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সাপোর্ট করেছেন। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার আম্মুর অবদান অনেক। বন্ধু-বান্ধব যারা ছিল তারাও খুব উৎসাহ দিয়েছে। সবাই আমাকে সবসময় সার্পোট দিয়েছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন যখন দেখেছি তখন আমার জমানো সামান্য কিছু টাকা দিয়েই শুরু করি। এখন প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। ভবিষ্যতে নিজেকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। নিজের একটি প্রতিষ্ঠান হবে এবং প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবো। বেকারত্ব দূর করার জন্য এই অবদানটুকু রাখতে চাই।