নাসির আহমদ (ছদ্মনাম)। ছিলেন নৌ বাহিনীতে কর্মরত। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব অনেকে বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যে। গত দুই বছরে স্টুডেন্ট ভিসা, কেয়ার ভিসায় আশেপাশের অনেকেই গেছেন স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে। পরিবারকে রাজি করিয়ে তিনিও দেশের চাকরি ছেড়ে প্রায় ২০লাখ টাকা খরচ করে পাঁচ মাস আগে কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে স্বপ্নের দেশের স্বাদ অনেকটা ফিঁকে হয়ে গেছে। যে কেয়ার হোমে কাজ করার জন্য তিনি এসেছিলেন তাঁরা কোন কাজ দিচ্ছে না। উল্টো বলে দিয়েছে অন্য জায়গায় কাজ করে ট্যাক্স দেয়ার জন্য। এখন কেয়ার হোমের বদলে রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন তিনি।
শুধু নাসিরই না বাংলাদেশ থেকে কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসা অনেকেই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। কাজ না পেয়ে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে স্ত্রীর কেয়ার ভিসায় ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে এসেছেন আরিফ। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁর স্ত্রী কেয়ার হোমে কাজ পান নি। এজেন্সি থেকে বলা হয়েছে, নিজ থেকে চাকরি খোঁজে নেয়ার জন্য।
আরিফ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি রেস্টুরেন্টে কাজ করছি, যে এজেন্সির মাধ্যমে এসেছি তাঁরা এখন বলছে কেয়ার হোমে কাজ নেই, অন্য জায়গায় কাজ করে স্ত্রীর ট্যাক্স প্রদানের জন্য। এখন আমার স্বল্প আয়ে বাসা ভাড়া, খাবারের খরচ বাদে স্ত্রীর বিপুল টাকা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এখানে এসে রুজি করার বদলে উল্টো আর্থিক সংকটে পড়েছি।
এদিকে প্রতারণায় বিষয়টি আঁচ করতে পেরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কেয়ার হোমে অভিযান চালাচ্ছে হোম অফিস। কেয়ার ভিসায় আসা লোকজন ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে হোম অফিস। এর আগে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগে কেয়ার ভিসায় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, জিম্বাবুয়ে, ফিলিপাইনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল যুক্তরাজ্যের মাইগ্রেশন এডভাইজারি কমিটি।
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব রাজীব হোসেন বলেন, কেয়ার ভিসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ইউকেতে একটি প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। এরা ১৫ থেকে ২৪ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত নিয়ে কেয়ার ভিসার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে আনার পর অনেককে কাজ দিতে পারছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন কেয়ার ভিসায় আসা লোকজন। অনৈতিক লেনদেনের কারণে কোন জায়গায় তাঁরা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও করতে পারছেন না।
ব্যারিস্টার এম আব্দুস শাহিদ বলেন, কেয়ার ভিসায় আসার আগে এজেন্সি সস্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আসা উচিত। ভালোর সঙ্গে অনেক খারাপ এজেন্সিও আছে। কেয়ার ভিসায় অনেকে আসার পর কাজ পাচ্ছেন না, এ অভিযোগ অনেকের।