মৌলভীবাজারে মেলায় ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার শেরপুরে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় এবার প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কেনাবেচা হয়েছে। করোনার কারণে গত দুই বছর মেলা না হলেও এবার উৎসবমুখর পরিবেশে জমজমাট মেলা বসেছে।

মাছের মেলা শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে গতকাল রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে। মেলায় নানা জাতের ছোটবড় মাছ উঠেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের এক ব্যবসায়ী দুই মণ ওজনের একটি বাগাড় মাছ এনেছিলেন। তিনি মাছটি সুরমা নদী থেকে ধরেছেন। মেলায় ৩০টি মৎস্য আড়তে পাইকারি ও খুচরায় মাছ বিক্রি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০ বছর আগে সদর উপজেলার মনোমুখ এলাকার মথুরা বাবু নামক এক জমিদার মনু ও কুশিয়ারা নদীর মিলনস্থলে এই মেলা শুরু করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫০ বছর চলে। ১৯৭২ সালে উপজেলার মনোমুখে এ মেলা নিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্ব বাধায় জেলা সদরের ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুরের অদূরে ব্রাহ্মণ গ্রামে কুশিয়ারা নদীর তীরে বসছে এই মেলা। দিনে দিনে বাড়ছে মেলার আকার। বর্তমানে এটি দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে শুরু হলেও বর্তমানে তা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

মেলায় বিশাল আকারের পাকা রুই, কাতলা, বাগাড়, কালবাউস, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এনেছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাছ বিক্রি শুরুর পর থেকেই বেচাকেনা বাড়তে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা। মাছগুলো সাধারণত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ মৌলভীবাজারের হাকালুকি, হাইল হাওর, কওয়াদিঘী হাওর, সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওর এবং দেশের ছোট বড় হাওরের মাছ। এর মধ্যে টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকির হাওরের মাছ মেলায় বেশি ছিল।

মাছ ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন, বাজার এবার জমেছে। ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আট লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি।

আরেক মাছ ব্যবসায়ী নাজমুল মিয়া বলেন, গত দুই বছর মাছের মেলা বন্ধ ছিল। এবার জমেছে। নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ এসেছে।

শেরপুর আড়তের ঠিকাদার তপু ভৌমিক বলেন, প্রতি বছর এখানে নিলামের মাধ্যমে মাছের আড়ত পরিচালনা করা হয়। এ বছর প্রচুর মাছ উঠেছে। এবার কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। মূলত স্থানীয় কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাউয়া দিঘি হাওরের মাছ এ মেলায় বেশি উঠেছে।

মৌলভীবাজার জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গত বর্ষায় সিলেট বিভাগে বন্যা হওয়ায় সবকটি হাওর-জলাশয়ে মাছ বেড়েছে। গত অর্থবছরে মৌলভীবাজারে মাছের উৎপাদন ছিল চার হাজার ৫৫২ টন। এবার এর উৎপাদন আরও বেড়েছে। আগামী জুনে এর হিসাব আসবে।

মেলায় পাশাপাশি নানা ধরনের গৃহস্থালি ও বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা নিয়ে বসেছিল অসংখ্য দোকান। অন্যদিকে, কাঠের তৈরি খাট, আলমারি, আলনাসহ নানা আসবাবপত্র নিয়েও এসেছিলেন ব্যবসায়ীরা।