সংবাদ সম্মেলনে এক ভাইয়ের আকুতি

মাধবপুরে ১১ বছরেও উদ্ধার হয়নি কিশোরী হেমন্তি রবি দাস

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ১১ বছরেও উদ্ধার হয়নি হেমন্তি রবি দাস নামের এক কিশোরী। বোনকে ফিরে পেতে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়ে যাচ্ছেন কিশোরীর ভাই ও পরিবারের স্বজনরা। তবে বোনের খোঁজতো মিলছেই না, উল্টো হুমকি পাচ্ছেন দেশ ছাড়ার।

তাই হেমন্তি রবি দাসকে ফিরে পেতে ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

শনিবার (১ জুলাই) মাধবপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেমন্তি রবি দাসের ভাই রঙ্গু রবি দাস ও তার স্ত্রী শিল্পি রবি দাস।

রঙ্গু রবি দাস তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের ঘিলাতলী গ্রামের মৃত প্রেমলাল রবি দাসের মেয়ে হেমন্তি রবি দাস ২০১২ সালে তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে একই ইউনিয়নের কুলাইচর গ্রামের মৃত সফর উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও নাসির উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ত। হঠাৎ একদিন হেমন্তিকে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে হেমন্তি রবি দাসের ভাই রঙ্গু রবি দাস স্থানীয় মেম্বারের সহযোগীতায় তার বোনকে উদ্ধার করেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর হেমন্তি জসিম উদ্দিনের পুকুরে স্নান করতে গেলে নিখোঁজ হয়। পুকুর পাড়ে হেমন্তির জামা কাপড় পাওয়া যায়।

খোঁজ খবর নিয়ে হেমন্তির পরিবার জানতে পারে, জসিম উদ্দিন হেমন্তিকে হবিগঞ্জ জেলা শহরে একটি বাসায় আটক করে রেখেছে। তখন হেমন্তির পরিবারের লোকজন তৎকালীন স্থানীয় ইউপি সদস্য সিদ্দিক মিয়াসহ জসিম উদ্দিনের হবিগঞ্জের বাসায় গেলে হেমন্তিকে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তখন জসিম উদ্দিন হেমন্তির পরিবারকে বলেন হেমন্তি অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে তাই তার সাথে দেখা করা যাবে না।

এই ঘটনার শোক সইতে না পেরে হেমন্তির বাবা-মা স্ট্রোক করে মারা যান।

রঙ্গু রবি দাস আরও বলেন, ২০১২ সালে হেমন্তি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই হেমন্তিকে ফিরে পেতে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিতে থাকি। ২০১৯ সালে ১৫ ডিসেম্বর তৎকালিন হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে রঙ্গু রবি দাস অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় জসিম উদ্দিন ও তার ভাই নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় জসিম উদ্দিন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো আমার নামে আইসিটি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তাছাড়া আমার পরিবারকে দেশ ছাড়া করারও হুমকি দিচ্ছে জসিম উদ্দিন ও তার লোকজন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী, বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ও কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নিকটও লিখিত আবেদন করেন রঙ্গু রবি দাস।

সংবাদ সম্মেলনে রঙ্গু রবি দাস তার পরিবারের নিরাপত্তা ও তার বোনকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে এই ব্যাপারে জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রঙ্গু রবি দাস যে অভিযোগ করেছে সেগুলো মিথ্যা। হেমন্তি রবি দাস ২০১২ সালে হবিগঞ্জ নোটারী পাবলিক কার্য্যালয়ে এফিডেভিট করে স্ব-ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। পরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মেহেরনগর গ্রামের জনৈক সফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। বর্তমানে তার একছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

তবে তালিবপুর আহছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে হেমন্তি রবি দাস ষষ্ট শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। স্কুলের সার্টিফিকেটের হিসাবে তখন হেমন্তির বয়স হওয়ার কথা ১২ বছর।

১২ বছরের একজন মেয়ে স্বইচ্ছায় ধর্ম ত্যাগ করতে চাইলে আইনগত ভাবে তাকে ধর্মান্তর করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, এফিডেভিটটা তিনি করেন নি। যিনি এফিডেভিট করেছেন তিনি বলতে পারবেন।

হবিগঞ্জ নোটারী পাবলিক কার্য্যালয়ের নোটারিয়ান সফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এত আগের বিষয় তার মনে নাই।