হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সোনাই নদী বহরা রাবার ড্যামের সংরক্ষিত এলাকা থেকে বালু লুটের হিড়িক পড়েছে।
সোনাই নদীর রাবার ড্যাম এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেিছেলা মাধবপুর উপজেলা প্রশাসন । বালু উত্তোলন বন্ধে সোনাই নদীর রাবার ড্যাম এলাকা জুড়ে বেশ কিছু সাইনবোর্ডো লাগানো হয়। মাধবপুর উপজেলা সাবেক উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন রাবার ড্যাম এলাকায় সাইনবোর্ড গুলো স্থাপন করেন কিন্তু বালুখেকোরা এই সব সাইনবোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিদিন দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।
এইসব চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ড্রেজার মালিক ও বালু কারবারিরা।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে বালু তোলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালীরা বালু তোলার কারনে নদী ভাঙ্গন, রাবার ড্যামের ক্ষতি হচ্ছে। ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে বালু উত্তোলনে বিধি নিষেধ থাকলেও কিছুই মানছে না বালুখেকোরা। আর এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তারা নদীর সর্বনাশ ডেকে আনছে বলে মত পরিবেশবাদীদের।
জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৭ মার্চ হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান স্বাক্ষরিত হবিগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি বালু মহাল ১৪৩০- ১৪৩১ সনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এই সব বালু মহালের মধ্যে রয়েছে- মনতলা ও চৌমহনী এলাকার বালু কোয়ারি। মৌজার নাম কাশিমপুর, আলাবক্সপুর, মনোহরপুর, মঙ্গলপুর, গাজীপুর ও আশ্রফপুর। মনতলা কোয়ারির মৌজার নাম বোরহানপুর, ভবানীপুর, দূর্লভপুর, আফজলপুর, বহরা। রসুলপুর কোয়ারির কিছু বালু মহাল রয়েছে মৌজার নাম এক্তারপুর, ভান্ডারুয়া, শাহজাহানপুর, সম্পদপুর, বড় ধলিয়া,সেলিমপুর, রসুলপুর উত্তর।
এসব বালূমহাল থেকে বালু উত্তোলনের টেন্ডার নোটিশের ১৪ নম্বর শর্তে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে – ভু উপরিভাগ হতে পাঁচ মিটার গভীরতা পর্যন্ত অযান্ত্রিক (কোদাল, শাবল, বালতি ও ঝুড়ি) দিয়ে বালু উত্তোলন করতে হবে। সিলিকাবালু উত্তোলনের শেষে মাটি বালু দিয়ে পুনরায় খননকৃত ( কুপ/ গর্ত) ভরাট করে দিতে হবে।
১৫ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে কোয়ারির অস্তিত্ব রক্ষায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বোমা মেশিন ড্রেজার বা অন্য কোন যন্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ন রূপে নিষিদ্ধ এবং জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৮ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে সেতু কালভার্ট ডাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক মহাসড়ক, রেল লাইন ও অন্যান্য পূর্নসরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা থেকে সর্বনিন্ম ১৫০ মিটার ,বসত বাড়ি, জনপথ , ভবন, শিক্ষা স্থাপনা, কবরস্থান ৫০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে কোয়ারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বালু উত্তোলনকারীরা বড় বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সেতু, রাবার ড্যাম, বসত বাড়ির আশেপাশ থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বহরা রাবার ড্যাম এলাকার ৫০০ মিটারে মাঝে বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিপনন বন্ধ করার জন্য সাইনবোর্ড লাগানো হলেও তা মানছে না কেউ।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক সুজন মিয়া জানান, একটি প্রভাবশালী মহল অনেকটা জোর পূর্বক রাবার ড্যামের আশে পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। তাদেরকে কয়েকবার নিষেধ করা হলেও তারা শুনে না।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবত রাবার ড্যামের নিকট থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে রাবার ড্যামটি অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি অনেকবার বাধা দিয়েছেন কিন্তু বালুখেকোরা বাধা মানে না।
বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলাউদ্দিন জানান, আনু মিয়া নামে জনৈক এক ব্যাক্তি রয়েছেন তিনি নিয়মিত বালু ও মাটির ব্যবসা করেন। তার সাথে আরো কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে তারা রাতের আধারে বাধের মাটি বিক্রি করে মোটামুটি সাবাড় করে ফেলেছে। সরকার যদি তাদের ইজারা দিয়ে থাকেন তাহলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের দাগ, খতিয়ান ইত্যাদি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। উপজেলা নিবার্হী অফিসার সাহেব যদি এই কাজটা করতেন তাহলে চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি নিশ্চয় জানতেন।
এই বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাহাত বিন কুতুব জানান, বালু মহালগুলো পরিবেশ – জ্বালানি মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসক থেকে ইজারা দেওয়া হয়। রাবার ড্যাম এলাকাটি লিজকৃত জায়গার মধ্যে পড়েছে তাই যারা লিজ এনেছে তারা বালু উত্তোলন করছে।
রাবার ড্যাম এলাকার আশে পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা নিষেধ করা হলেও তারা কিভাবে বালু উত্তোলন করছে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
যারা লিজ এনেছেন উনাদের ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা বুজিয়ে দেওয়ার জন্য উনাকে কোন চিঠি দেওয়া হয়নি।
মাধবপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ মনজুর আহসান জানান, রাবার ড্যামটি পড়েছে বালু মহালের ভিতর। মনোহরপুর মৌজায়। তাই যারা লিজ নিয়েছে তারা আইনগত ভাবে বৈধ।
রাবার ড্যামের আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে পূর্বে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছিল রাবার ড্যামের আশেপাশ থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রি বন্ধ রাখার জন্য। তাহলে তারা কিভাবে বালু উত্তোলন করছে এমন প্রশ্নের তিনিও কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
যারা বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন উনাদের ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনিও এসিল্যান্ড এর সুরেই বলেন, তাকে কোন চিঠি দেওয়া হয়নি।