ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি : শান্তিগঞ্জে নাহিদ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অনেক রক্ত-স্রোতের ইতিহাস মাড়িয়ে বাংলাদেশ আজ এ পর্যন্ত এসেছে। একটা সক্ষম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনন্য উচ্চতায় যাচ্ছে। অথচ এ দেশটাকে বিএনপি সরকার লুটপাট করেছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ইচ্ছা করে পণ্যের দাম বাড়ায়নি, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও মহামারি করোনাও পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ অন্যতম কারণ।’

বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের তুলনায় অনেক ভালোভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি চান যে লক্ষ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সে লক্ষ্যেই যেনো আমরা আমরা চলি। আমরা তাঁর দেখানো পথেই চলবো।’

দেশ গঠনে এবং স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রামী। অন্যায়ভাবে পাকিস্তানীরা আমাদের শাসন করতে চেয়েছিলো। আমরা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি, আমরা তা মেনে নেইনি।
ধ্বংসস্তুপ থেকে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে তুলে এনেছেন। অথচ ৭১ এর পরাজিতরা আজও সক্রিয়। আর তাদের পূর্বপুরুষরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।

সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে দুই বারে শিক্ষায় ব্যাপক সংস্কার করেছি। এই সাহসী সরকারের অধীনেই আমি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সর্বপ্রথম ১৯ কোটি বই বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি। এখন ৩৫ কোটি বই দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তখন বলেছিলেন আমরা পারবো না, আমরা সাহস করেছি। পেরেছি। অনেক শিক্ষানীতি পরিবর্তন করেছি। এখনো আমাদের প্রচলিত শিক্ষানীতি চলছে। কেউ বিরোধীতা করে নাই।’

তিনি বলেন, ‘মেয়েদের নগদ বৃত্তি ব্যবস্থা ছিলো সামান্যতম। আমরা এসে ব্যপকহারে চালু করলাম। ছেলেদের শিক্ষাবৃত্তিও চালু করলাম। আমরা চাই ছেলে-মেয়েরা আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সোনার বাংলা গড়ে তুলুক। বর্তমান প্রজন্মকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সুশিক্ষা শিক্ষিত করে তুলতে নতুন এই প্রজন্মকে। উপযুক্ত শিক্ষা, জ্ঞান দিয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও এগিয়ে আনতে হবে। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা অর্জন করতে হবে।’

বলেন, বিদেশ থেকে বীজ, সার, প্রযুক্তি এনে সাধারণ কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যে কারণে দেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শান্তিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক হওয়া সভাপতি হাজি আবদুল হেকিম। সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।

তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে একচুলও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কে নির্বাচনে আসলো আর কে আসলো না তা দেখা হবে না। বিএনপি যদি নির্বাচনে না এসে সন্ত্রাস করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হবে। আমরা মৃত্যুর মিছিলে পা রেখে বর্তমানে এসে পৌঁছেছি। অপপ্রচার করে, গুজব ছড়িয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’

সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি বলেন, ‘আমি কাজের মানুষ। আপনাদের দ্বারা নির্বাচিত শেখ হাসিনার একজন উন্নয়নকর্মী হচ্ছি আমি। আপনারাই আমার শক্তি। আপনারা আমাকে সংসদে পাঠিয়েছেন কাজ করতে, আপনাদের জন্য কাজ আনতে। আমি রাণীগঞ্জ সেতু, সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, জগন্নাথপুরে এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বিটাক, রেলসংযোগের জন্য কাজ করছি। উন্নয়ন সবখানে হবে। দিরাই, শাল্লা, আজমিরিগঞ্জ, জলসুখা, ধর্মপাশাসহ সবখানে উন্নয়ন হবে। নেত্রকোনা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা করবো। আপনারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে রাখুন, আমাকে একটু কাজের সুযোগ দিন। আমি কাজ করবো।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, ছাতক-দোয়ারা (সুনামগঞ্জ-৫) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।

সম্মেলন উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ ও হায়দার চৌধুরী লিটন।

এসময় জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।