শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন

মাঠে আ. লীগের ৪ প্রার্থী, দলের দিকে তাকিয়ে আনছার-ফারুক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই দেশজুড়ে বইছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। ষষ্ঠ বারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে চলতি বছরের মে মাসে। সে অনুযায়ী সারাদেশেই কমবেশি প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবছর উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিক না রাখায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত চারজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে গণসংযোগ করছেন। তারা হচ্ছেন- সুনামগঞ্জ সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পুত্র ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাদাত মান্নান অভি, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন দোলন। তবে শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা কমতে পারে বলেও কানাঘুষা রয়েছে।

তবে, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমদ নির্বাচন করবেন কি না তা নির্ভর করছে তার দলের সিদ্ধান্তের উপর। যদিও বিএনপি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো ইতিবাচক কোনো ভাবনা ভাবছে না। তবে দল সায় দিলে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন।

এদিকে, শুরুতে যারা প্রচারণায় নেমেছিলেন তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করায় পুরোনো হিসেব-নিকেশ সম্পূর্ণ বদলে যায় এ উপজেলায়৷ প্রচারণায় নামেন আরও একাধিক প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার পরিবর্তন হওয়ায় প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদসহ সাধারণ ভোটাররাও নতুন করে হিসাব কষতে শুরু করেছেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এমন ধারণা থেকে এর আগে আবুল কালাম ও বোরহান উদ্দিন দোলনের নাম আলোচনায় ছিলো। তবে বিএনপি থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় নির্বাচনী আলোচনায় নতুন সুর বইছে শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। যদি বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীর মধ্যেই হবে নির্বাচন এমন আলোচনাই এখন উপজেলাজুড়ে। উপজেলা নির্বাচনী আলোচনার শুরুর পর থেকেই মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে। দলমত নির্বিশেষে সবদিক থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে রাজনীতির মাঠের নতুন মুখ মান্নানপুত্র অভি ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন উপজেলাব্যাপী। নিজের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। নতুন ও তরুণ প্রার্থী হিসেবে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন তিনি।

বসে নেই জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুর রহমান সিরাজ। উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও সভাসহ সব ধরণের প্রচারণা অব্যাহত রেখে ভোটের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আইনজীবী বোরহান উদ্দিন দোলনও যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কথা বলছেন, ভোট চাইছেন। করছেন গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক।

বিএনপি থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো চিন্তাই করছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন। দল সিদ্ধান্ত দিলে তাদের যে কেউ প্রস্তুত আছেন নির্বাচনের জন্য। দলীয় সিদ্ধান্ত ও তৃণমূল নেতাকর্মীর মতের সমন্বয় করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। তবে, উপজেলার সকল ইউনিয়নে ইউনিয়নে তাদের দলীয় কর্মীসভা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির একটি সূত্র।

মূলত এসব প্রার্থীদের ঘিরেই নির্বাচনী আলোচনা সরগরম হয়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। কে কার চেয়ে যোগ্য? শেষমেষ কে কে প্রার্থী হবেন? কারা থাকবেন ভোটের মাঠে। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? এসব নিয়েই এখন হিসেব-নিকেশ চলছে উপজেলাব্যাপী।

এদিকে, ভোটের মাঠে ভালো সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে অর্থনীতিবিদ সাদাত মান্নান অভি বলেন, যতদিনই মাঠে কাজ করেছি ততদিনেই মানুষ আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি মূলত আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করতে চাই। আশা করছি মানুষ আমাকে সে সুযোগ দিবেন। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, গত পনেরো বছরে আমার বাবার হাত ধরে আমাদের এলাকায় যথেষ্ট ভৌত উন্নয়ন হয়েছে। বাবার দেখানো পথেই আমি এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করে যেতে চাই। হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে মানুষ যেনো বিদেশে যেতে পারে সেজন্য কর্মমুখী শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে চাই। আশা করছি আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মানুষ আমাকে কাজে লাগাবেন।

আইনজীবী বোরহান উদ্দিন দোলন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে কাজ করছি৷ মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছেন। আমি আশাবাদী শেষপর্যন্ত ভোটাররা আমাকে গ্রহণ করবেন। গতকাল (বুধবার) শিমুলবাক ইউনিয়নের মুরাতপুর গ্রামে ছিলাম। আমি প্রার্থী হওয়ায় সেখানকার সব শ্রেণির মানুষ খুবই খুশি। এভাবেই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছি।

আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুর রহমান সিরাজ বলেন, আমি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে যাচ্ছি। আমার গ্রাম ডুংরিয়ায় সভা করে গ্রামবাসীর পরামর্শ নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছি। মানুষ ব্যপক সাড়া দিচ্ছেন। তারা পরিবর্তন চাইছেন। আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আশা করি এই ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত থাকবে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, এবছর আমি খুব সাড়া পাচ্ছি। যেখানে যাচ্ছি মানুষ ঘিরে ধরছে। আমার বিশ্বাস মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ব্যালটের মাধ্যমে। আমি কাজ করে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে আছি। ভোটাররাই আমার শক্তি। ভোটারদের ভাগ্য উন্নয়ন, জীবনমান ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমার কাজ চলমান।

উল্লেখ্য, এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যার প্রথমটি হবে আগামী ৪ মে। এরপর ১১ মে দ্বিতীয়, ১৮ মে তৃতীয় ও ২৫ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন।