ভোটে জয় ইমরানের, জোটে এগিয়ে নওয়াজ-বিলাওয়াল

পাকিস্তানে নির্বাচনের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারাগার থেকেই ভোট ময়দানের শেষ বল পর্যন্ত খেলতে চাইছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেটার ইমরান খান। তবে রাজনীতির মাঠে ইমরানকে একটুও ছাড় দিতে রাজি নন তার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।

পাকিস্তানের নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনেই জিতেছেন ইমরান-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি) সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন।

পাকিস্তানের আইনসভায় মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসন ৭০টি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি ও নারীদের জন্য ৬০টি। প্রতিবার নির্বাচনে ভোট হয় ২৬৬ আসনে। সরকার গঠনে জিততে হয় ১৩৪ আসন। আর আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ১৬৯টি আসনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এবারের নির্বাচনের হিসাব পাল্টে গেছে শুরু থেকেই। এক আসনে প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত হয়েছে। ফলে মোট ভোট হয়েছে ২৬৫ আসনে। ফলে সরকার গঠনের জন্য ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৩৩টি পেলেই হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যে ফলাফল তাতে পিএমএল-এন ও পিপিপির একত্রে ১২৪টি আসন রয়েছে। বাদবাকি আসনের জন্য তাদের অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোকে জোটে টানতে হবে। নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত আসনের কোটা নির্ধারিত হয়।

শনিবার জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, শুক্রবার রাতে নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ বৈঠক করেছেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে। তারা একত্রে কেন্দ্রে ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান মহসিন নাকভির বাড়িতে ওই বৈঠক হয়।

এ ছাড়া নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যেই অন্যদের প্রতি জোট সরকারে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশটির সামরিক বাহিনী বেশ প্রভাব রাখে। নওয়াজ শরিফের পেছনে সেনাবাহিনীর সমর্থন আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন আসন জিতেছে ৭১টি। অন্যদিকে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জিতেছে ৫৩টি আসন। বাদবাকি আসনগুলোতে বিজয়ী হয়েছেন ছোট দল ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী।

পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রায় ১০০ বিজয়ী প্রার্থী এবার স্বতন্ত্র। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন বাদে সবাই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৪টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়নি। সেগুলোর বেশির ভাগই বেলুচিস্তান প্রদেশের বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এ রকম পরিস্থিতিতে ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ- দুজনেই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করেছেন। নওয়াজ শরিফ নিজেকে বিজয়ী দাবি করলেও স্বীকার করে নিয়েছেন যে একা সরকার গঠন করার মতো যথেষ্ট আসন নেই তার হাতে। তবে জোট সরকারের প্রধান হিসেবে দেশকে বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

অন্যদিকে নওয়াজের জয়ের দাবি প্রত্যাখ্যান করে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন ইমরান খান। সে ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের উদযাপন করতে বলেছেন তিনি। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তথ্য ফাঁস, দুর্নীতি ও অবৈধ বিয়ের অভিযোগ রয়েছে। তার দল পিটিআইকে এবারের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে। পাশাপাশি গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনের ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, নির্বাচনের ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ নানাবিধ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সে দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি সত্য নয়। অন্য কর্মকর্তারাও পশ্চিমের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কোনো স্পষ্ট ফলাফল না থাকা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেছেন, ২৫ কোটি জনসংখ্যার প্রগতিশীল দেশে রাজনৈতিক মেরূকরণ শোভা পায় না। তিনি সব পক্ষকেই পরিপক্বতা ও ঐক্য দেখানোর আহ্বান জানান।

জেনারেল মুনির বলেন, ‘নির্বাচন জয়-পরাজয়ের কোনো প্রতিযোগিতা নয়, বরং মানুষের আদেশ নির্ধারণের অনুশীলন।’

নির্বাচন চলাকালে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আইনসভার সাবেক সদস্য ও ন্যাশনাল ডিফেন্স মুভমেন্ট পার্টির প্রধান মোহসিন দাওয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরানশাহতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের বন্দর শহর গোদারে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ হওয়ার খবর এসেছে।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবর বলছে, পাকিস্তানের নির্বাচনে ধর্মীয় নয়, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোই ভোট পেয়েছে বেশি। জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ও জামাত উদ-দাওয়ার মতো দলগুলো পিছিয়ে রয়েছে অনেকটাই।

সূত্র : বিবিসি, ডন, জিও নিউজ, আনন্দবাজার