- দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টির রেকর্ড
- ৮ জেলায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি
- ত্রিপুরায় বন্যার ফলে ডুম্বুর হ্রদের বাঁধের একাংশ খুলে দিয়েছে ভারত
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির ফলে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ দেশের আট জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
মুষলধারে বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ জমি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলাসমূহের প্রশাসনের তথ্যমতে, আটটি জেলায় ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ফেনী ও নোয়াখালী।
ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ছোট ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেনী সদর ও দাগনভূঁইয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকে জেলার অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরশুরামে একজন নিখোঁজ বলে জানা গেছে।
মুহুরী, সিলোনিয়া ও কাহুয়া নদীর পানি আজ আরও বেড়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত ৩৭ বছরে এত বড় বন্যা তারা দেখেননি।
আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় উজান থেকে আসা পানির কারণে প্রতি বছর বন্যা হয়, তবে ১৯৮৮ সালের পর এ বছরের মতো ভয়াবহ বন্যা হয়নি।
তিনি বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে।
নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে আজ বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৱ
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেছেন, কবিরহাট, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জসহ আটটি উপজেলা এবং বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বন্যায় প্রায় বিশ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পৌরসভার এক লাখের বেশি মানুষ রয়েছে।
কুমিল্লায়, অবিরাম বৃষ্টি এবং ভারতের ত্রিপুরার ডুম্বুর হ্রদে একটি স্লুইস গেট খোলার কারণে আজ গুমতি এবং মুহুরি ফুলে উঠেছে। বন্যায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলায় বন্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ত্রিপুরায় অবিরাম বর্ষণ ও ভূমিধসে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে আসা পানিতে আখাউড়া স্থলবন্দর পানির নিচে চলে গেছে। বন্দরের কাছাকাছি অন্তত ১৫টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় ৩,০০০ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
আখাউড়া-আগরতলা সড়কে কালুন্দি খালের ওপর একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় বুধবার সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
খোয়াই, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর অনেক স্থানে উপচে পড়ায় হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আজ অবনতি হয়েছে।
মৌলভীবাজারের ২০৮টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অবিরাম বর্ষণে আজ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ও এর আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হালদা নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে ত্রাণসামগ্রী ও শুকনো খাবার পাঠিয়েছেন তারা। বন্যা কবলিত জেলাগুলির স্থানীয় প্রশাসন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী, সেনাবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।’