বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কায় গত দেড় মাসে তেলের দাম কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে নেমে এসেছিল। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববাজারে আবারও বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম।
শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সেই তেলের দাম প্রায় ১০০ ডলারে পৌঁছেছে। এই দর গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
যে কোনো মুহূর্তে তেলের ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেকরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ ডলার ৭১ সেন্ট বা ৪ শতাংশ বেড়ে ৯৮ ডলার ১৩ সেন্টে উঠেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯২ ডলার ৫০ সেন্ট; এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৪ ডলার ৫৮ সেন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।
সপ্তাহ খানেক আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৬ ডলার ৩৯ সেন্ট এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৭৯ ডলার ১২ সেন্টে নেমে এসেছিল। যা ছিল গত জানুয়ারির পর সবচেয়ে কম।
যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও গত বুধবার অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দেয় শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জোটের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তেলের বাজারে নিজেদের আধিপত্য ও দাম ধরে রাখতে ওপেক প্লাস এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পরিবর্তে এখন নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তির জন্য নতুন উৎস খুঁজছে ভারত। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তিও করেছে তারা।
অপরিশোধিত তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছিল ওপেক প্লাসের সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা বারবার উৎপাদন না কমাতে অনুরোধ জানিয়েছে। তাতে মত পাল্টায়নি ওপেক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও এই সংস্থার অন্যতম সদস্য এখন রাশিয়া। বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মার্চ থেকে রাশিয়ার তেল নেওয়া কমিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা জোট। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর ইইউর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ফলে প্রয়োজন মেটাতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেল কেনার পথে হাঁটছে ইউরোপ। এতে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছে ভারতসহ এশীয় দেশগুলো। এ জন্যই মেয়াদি চুক্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে তেল কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত।
অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক আমেরিকান কোম্পানি পিভিএম ওয়েল অ্যাসোসিয়েটসের বাজার বিশ্লেষক তামাস ভার্গা বলেন, ‘ওপেক তেল উপাদন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণায় হঠাৎ করেই তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। যে কোনো মুহূর্তে এর দর আবার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। গত ৫ আগস্ট রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন মধ্যরাত থেকে নতুন দর কার্যকর করা হয়। এর পর থেকেই বাস, ট্রাক, অ্যাপের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, লঞ্চ ও হিউম্যান হলারের ভাড়া বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তা আরও একদফা বাড়ে।
এরপর গত ২৯ আগস্ট খানিকটা মুখ রক্ষা করতে জ্বালানি সব ধরনের তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমায় সরকার।
সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলে আসছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে ফের তেলের দাম বাড়ায় সে সম্ভাবনা যে আর নেই, সেটা শুক্রবার সরাসরি জানিয়েয়ে দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।