বিশাল ইয়াবার চালান আটক, ৩ চক্রের ৯ জন গ্রেপ্তার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবাসহ পৃথক তিন চক্রের মোট ৯ কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)

গ্রেপ্তার কারবারিদের মধ্যে দুজন মামি-ভাগ্নে চক্র, আরেকটিতে চার চাকমা অপর চক্রে তিন কাভার্ডভ্যান চালক।

ডিএনসি মেট্রো উত্তর কার্যালয় বলছে, সম্প্রতি মাদক কারবার ও ইয়াবার চালান পাচারে নিত্য-নতুন কৌশল হিসেবে চাকমাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন কি তারা কক্সবাজার থেকে মাদক সংগ্রহ করলেও পাহাড়ি দুর্গম রুট ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহ করে আসছে।

গ্রেপ্তার চাকমারা হলেন, ওমং তইন চাকমা (৪০), পাইয়াদীবী চাকমা (১৯), বামাংথাই চাকমা (২৯), কেরামা চাকমা (৩৫)। তারা সবাই কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা।

অন্য কারবারিরা হলো, ভাগ্নে মো. আলী হায়দার রাব্বী (২৭) ও মামি মুমিনা খাতুন (৪৪) এবং কাভার্ডভ্যান চালকের আড়ালে ইয়াবা কারবারি মো. দিদার হোসেন (২৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৪), মো. মনির হোসেন (২৩)।

রোববার (২১ জানুয়ারি) থেকে আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মোট ৪১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবাসহ জব্দ করা হয় একটি কাভার্ডভ্যান।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ডিএনসি মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা ইয়াবার একাধিক চালান বান্দরবান, রাঙ্গামাটি হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিএনসির একাধিক সার্কেলের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পৃথক অভিযানে চাকমা জনগোষ্ঠীর চারজনসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার মাদক কারবারিদের বরাত দিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, মূলত পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে তারা ইয়াবার চালান সংগ্রহ করে। এর মূল হাব হচ্ছে কক্সবাজার। কিন্তু কক্সবাজার থেকে বান্দরবান, খাগড়াছড়ির পাহাড়ি পথে ঢাকায় আনা হয় ইয়াবা। পরিকল্পনা অনুযায়ী উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার পার্শ্ববর্তী চন্দ্রা, আব্দুল্লাপুর হয়ে উত্তর জনপদের বিভিন্ন জেলা সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল।

গ্রেপ্তার চাকমা জনগোষ্ঠীর চার আদিবাসী মাদক পাচারের নতুন রুট রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান কেন্দ্রিক একটি মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। ঢাকার একটি মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে তারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।

পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার মুমিনা খাতুন ও মো. আলী হায়দার রাব্বী সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা যশোর কেন্দ্রিক একটি ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য। সম্পর্কে তারা দুজন মামি ও ভাগ্নে। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পরিবহনের জন্য তারা বিলাসবহুল এসি বাস ব্যবহার করে। ভাগ্নে রাব্বি আগের বাসে এসে ক্লিয়ারেন্স দেয়, পেছনে মামি পরিবারের সদস্য নিয়ে ভ্রমণ করার কৌশলে মাদক পরিবহন করে। তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তারা টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে যশোরে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করত। জিজ্ঞাসাবাদে এই সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। যাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান।

অপর চক্রের গ্রেপ্তার দিদার হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, ও মো. মনির হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা সবাই পেশায় ট্রাক চালক। তারা গাড়ী চালানোর আড়ালে তারা ইয়াবা পরিবহন করতো। ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে তারা ঢাকায় প্রবেশ করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যানসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। নিজেদের আড়াল করার জন্য তারা বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করতো। চলাচলের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঢাকা পর্যন্ত আসে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন মামলা দায়ের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।