বিয়ানীবাজারে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে খাল দখল

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নে সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসন খালের উপর স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশনার পাশাপাশি একদিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার নোটিশ দিলেও দখলধাররা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে খালটি ছোট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা সামান্য বৃষ্টি হলেই খালের পানি উপচে লোকালয় ঢুকে বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দাসউরা-বিবিরাই বাজার পর্যন্ত এলজিইডি রাস্তার পাশের ঝরাপাতা খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। খালের ৮০ শতাংশ অংশের মধ্যে পিলার ও কলাম বিম নির্মাণের পর মেঝে ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক। মেঝের ওপর শ্রমিকরা সাটারিং গাঁথুনির কাজ করছেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কামারকান্দি গ্রামের মৌর উদ্দিন নামে এক পঞ্চাশোর্ধ প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই পাকা ভবন নির্মাণ করাচ্ছেন। এ বিষয়ে মৌর উদ্দিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তার মেয়ে ঝুমা বেগম পিতা অসুস্থ বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝুমা বেগম জানান, তারা খালের জমি ইজারা নিয়ে খামার তৈরির উদ্দেশ্যে অস্থায়ী ভবন নির্মাণ করছেন। কিন্তু ইজারা নেয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি এ খালটি দখল ও দূষণে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। মৌর উদ্দিন ছাড়াও স্থানীয় মকরম আলী, শাব উদ্দিন ও সইর উদ্দিন নামে একাধিক দখলদকারী প্রভাবশালী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রভাবশালীরা স্থানীয় ইউপি ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করেই খাল দখল করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিলপাড়া ইউনিয়নের কামারকান্দি গ্রামের ঝরাপাতা খালটি এক দশক আগেও পন্য পরিবহন ও যাতায়াতে ব্যবহার করতেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন যাবত খালটি দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ায় এখন শুধুমাত্র কৃষিতে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি খালের বৃহৎ একটি অংশ দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আনা মিয়া সরকারি খালে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে অনুরোধ করলেও মৌর উদ্দিন ও তার পরিবার কাজ বন্ধ করেননি। এরপর ইউপি সদস্য মো. আনা মিয়া বিষয়টি তিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদকে অবগত করেন।

দখল হওয়ার কারণে ঝরাপাতা খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন উপকারভোগী কৃষক বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

তিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে অবৈধভাবে খাল দখলকারিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তিনি বলেন, খাল দখল হওয়ায় যেমন জলবদ্ধতার শিকার হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা তার উল্টো দিকে দখলের ভাটি এলাকায় পানির সংকটের কারণে জমি অনাবাদি রয়েছে।

এদিকে, সরকারি খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ভূমি অফিস এবং থানা পুলিশের দুটি পৃথক টিম সরেজমিন প্রদর্শন করে অবৈধভাবে খাল বা ভূমি দখলের সত্যতা পান। পরে তারা একদিনের নোটিশ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করেন।

বিয়ানীবাজার থানার এসআই অঞ্জন রায় এবং উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশক্রমে তারা সরেজমিনে গিয়ে সরকারি খালে স্থাপনা নির্মাণে সত্যতা পেয়ে অভিযুক্তদের একদিনের মধ্যে সেসব স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেছেন।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আয়েশা আক্তার জানান, সরকারি খালে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্তক্রমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী রবিবার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলেও জানান। সে সময় স্থাপনা পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।