উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতিভারী বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট। পানি বাড়তে থাকায় ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। এতে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।
বুধবার (১৯ জুন) সরেজমিনে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীননগর, কাজির পয়েন্ট, তেঘরিয়া, ষোলঘর সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায় পানি কিছুটা কমেছে। তবে শহরের অপর প্রান্ত হাছননগর, নতুনপাড়া, হাজিপাড়া, শান্তিবাগ, বাঁধনপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পানি বেড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। আবার এক জায়গার পানি নেমে গিয়ে অন্য জায়গা প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে জেলার কোনো হাওর কিংবা নদীর আর ধারণ ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সুনামগঞ্জ শহর ছাড়াও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা ও মধ্যনগর উপজেলা। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ।
জেলায় প্রায় ৫০০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যাকবলিত লোকজন নিজের ঘরের তৈজসপত্র, লেপ তোষক ও গৃহস্থতলি পশু এ সব সহ আশ্রয় কেন্দ্রে নিচ্ছেন আশ্রয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে। প্রতি উপজেলায় ৫টন করে জিআর চাল জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে সুনামগঞ্জ জেলার মানুষদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। বিগত ২০২২ সালে বন্যার মত পানি যদি দ্রুত গতি বাড়ে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সুনামগঞ্জ জেলা। এতে দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। এছাড়া জেলায় আগামী দুইদিন টানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল হুদা চপল জানান, আমরা সর্বদা সর্তক অবস্থানে রয়েছি। ইতি মধ্যে বন্যাকবলিতরা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। গত দুই দিনে অনেকেই নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছেন। আমরা ত্রাণ দিচ্ছি বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। এদিকে বিশেষ বরাদ্বের জন্য দুযোর্গ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। যে সকল জায়গায় গাড়ি যাচ্ছে সে সকল স্থানে নৌকাযোগে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।