বাংলার মেয়েদের প্রথমবারের মতো ভারত বদ

ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের তরুণীরা। স্বল্প পুঁজি নিয়েও দারুণ বোলিংয়ে ৪০ রানের ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ।

মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ১৫২ রান করে স্বাগতিক দল। মাঝারি মানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১১৩ রানে থেমেছে ভারতের ইনিংস। তাতে ভারতকে ৪০ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বাংলাদেশ এর আগে পাঁচটি ওয়ানডে খেললেও কোনটিতেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটির দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৪ ওভারে। প্রথমে ব্যাট করে সফরকারীদের ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ভারতীয় বিস্ফোরক ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানাকে (১১) ফিরিয়ে দারুণ সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। পরে এই পেসারের বোলিং তোপেই মুখ থুবড়ে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপ। স্কোরবোর্ডে আরও ১৭ রান যোগ হওয়ার পর মারুফার দ্বিতীয় শিকার হন আরেক ওপেনার প্রিয় পুনিয়া (১০)।

তার পর নাহিদা আক্তারের ঘূর্ণিতে দ্রুত বিদায় নেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর। ৫ বলে ৫ রান করে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। সফরকারীদের আসা যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশের চতুর্থ শিকার তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা যস্তিকা ভাটিয়া। ২৪ বলে ১৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পঞ্চম উইকেটে জেমিমাহ রুদ্রিগেজ ও দিপ্তী শর্মা মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধ ভেঙে ভারতীয়দের কোণঠাসা করতে ভূমিকা রাখেন রাবেয়া। তার লেগ স্পিনিং জাদুতে জেমিমাহ ১০ রান করে সাজঘরে ফিরলে ১৭ রানের জুটি ভাঙে।

তখনও প্রান্ত আগলে রেখে অলরাউন্ডার দিপ্তী শর্মা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিষিক্ত আমানজোত কৌরকে সঙ্গে নিয়ে ৬ষ্ঠ উইকেটে ৩০ রানের জুটি গড়ে আশার সঞ্চার করছিলেন। কিন্তু মারুফা পর পর দুই দলে আমানজোত ও স্নেহা রানাকে ফেরালে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের কাছে। আমানজোত ১৫ রানে আউট হন। পরের ওভারে নাহিদার শিকার হন দারুন ইনিংস খেলা দিপ্তী। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ বলে ২০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। লেজের ব্যাটাররা কিছুটা চেষ্টা করলেও জয়ের জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না। শেষ ব্যাটার হিসেবে বারেডি আনুশা রান আউট হলে ৩৫.৫ ওভারে ১১৩ রানে থামে ভারতের ইনিংস।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন পেসার মারুফা। ৭ ওভারে ২৪ রান খরচায় তার শিকার ৪ উইকেট। ম্যাচসেরাও তিনি। লেগ স্পিনার রাবেয়া খাতুন ২৩ রানে নেন তিনটি উইকেট। এছাড়া নাহিদা আক্তার ও সুলতানা খাতুন নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে মিরপুরে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতেই দুই ওপনোর মোর্শেদা খাতুন (১৩) ও শামিমা আক্তার সুপ্তাকে (০) হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ও ফারজানা হক মিলে ৪৯ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই জুটি ভাঙলে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ খেলতে থাকা ফারজানা হক ২৭ রানে আউট হলে ভাঙে দারুণ এই জুটি। তখন শুধু জ্যোতি এক প্রান্ত আগলে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। বাকিদের সহায়তা না মেলায় বেশি দূর যেতে পারেননি নিগার। ৩১তম ওভারে স্কোর ১০০ ছাড়ানোর পর আউট হয়ে যান তিনি। তবে ফেরার আগে ৬৪ বলে ৩ চারে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন।

তার পর বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য হয়ে আসে স্বপ্না আক্তারের মাঠে না থাকা। পেট ব্যাথার কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটার স্বর্ণা আক্তার। প্রথমবার ওয়ানডেতে সুযোগ পাওয়া এই ক্রিকেটারের ব্যাট হাতে মাঠেই নামা হয়নি। স্বপ্না ব্যাটিং করার সুযোগ পেলে স্কোরবোর্ডের সংগ্রহ আরও কিছু বাড়তে পারতো। শেষ দিকে রাবেয়া খান (১০), ফাহিমা খাতুন (১২) ও সুলতানা খাতুনের (১৬) ব্যাটিংয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫২ রানে।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে অভিষিক্ত আমানজোত কৌর সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন। দেবিকা বৈদ্য নিয়েছেন দুটি।