সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজে (এমসি) এবার ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী বহিরাগতদের হামলায় এক একিউএম শামসুল হুদা ইমরান নামের এক কলেজছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। আহত একিউএম শামসুল হুদা ইমরান ওই কলেজের মাস্টার্স ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে এমসি কলেজের পঞ্চম ছাত্রাবাসের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত একিউএম শামসুল হুদা ইমরান জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলেই পাশেই নিজের রুমে ছিলেন। এসময় উচ্চস্বরে কথাবার্তা শুনে তিনি এগিয়ে এসে দেখেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি (বহিরাগত) মাহিন তালুকদার কলেজের মাস্টার্স ফিজিক্স বিভাগের ছাত্র রাফসানের উপর চড়াও হয়েছেন। এসময় তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করলে বহিরাগত মাহিন তালুকদার তার উপর লোহার কিছু একটা দিয়ে হামলা চালান। এতে শামসুল হুদা ইমরানের মাথা ফেটে যায়। ঠোঠেও আঘাতপ্রাপ্ত হন ইমরান। এ অবস্থায় তিনি সিলেট অসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে তার মাথায় পাঁচটি সেলাই লাগে।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান আহত একিউএম শামসুল হুদা ইমরান।
ঘটনার ব্যাপারে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আবু এনাম রিয়াজ জানান, এটা তেমন বড় কোন ঘটনা নয়। গায়ে সাইকেল লাগা নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে। শামসুল হুদা ইমরান কিছুটা আহত হয়েছে।
বহিরাগত কিভাবে এখানে থাকে; এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা সবসময় থাকে না, সিলেট আসলে মাঝে-মধ্যে থাকে। পুলিশকে বলেছি, কিন্তু তারাও ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে এসএমপির শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, হামলার কোন অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। বহিরাগত আছে কি না সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখবে। বহিরাগতদের তাড়াতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সহায়তা চাইলে পুলিশ সহায়তা করবে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, এমসি কলেজের পঞ্চম ছাত্রাবাসে দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে বিপুলসংখ্যক বহিরাগত নিয়মিত বসবাস করছে। ছাত্রাবাসের ৫০৩, ৫০৪ ও ৫০৫ নং কক্ষে বসবাস করছেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি (বহিরাগত) মাহিন তালুকদার। মাহিন তালুকদার এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও সভাপতি প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন রাহীর বন্ধু। অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা রাহী বঙ্গবন্ধু হল তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ দখল করে বসবাস করছে। সে আবার, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হোসেনের অনুসারী।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেন, নেতৃত্বে থাকায় কেউ অনুসারী হতেই পারে। তবে এমসি কলেজ ছাত্রলীগ এখন অনেক সুশৃঙ্খল। গতরাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে ছাত্রলীগ এরকম ঘটনা সমর্থন করে না।
এদিকে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কি ব্যাবস্থা নেবেন; জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আবু এনাম রিয়াজ বলেন, ‘আমি তাদের (বহিরাগত) সাথে কথা বলবো। কথা না শুনলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেবো’।
এর আগে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীরা। তখন থেকেই দেশব্যপী সমালোচনার মুখে পড়ে এমসি কলেজ ও ছাত্রলীগ। সে সময় নানাবিধ চাপের মুখে বহিরাগতরা সাময়িক সরে গেলেও ফের কলেজ হোস্টেলে আস্তানা গেড়ে তারা। যাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে আছে ছাত্রলীগ।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আশঙ্কা, বহিরাগতদের তাড়াতে না পারলে যে কোন সময় আবারও সংবাদের শিরোনাম হবে বহু গুণীজনের জন্ম দেওয়া ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ।