সিলেটে বন্যায় ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ

আকস্মিক বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘি, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে।  এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।  মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও হয়েছে অবকাঠামোগত ক্ষতি। এছাড়া মাছ ভেসে গিয়ে সুনামগঞ্জেও প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, বন্যায় মাছ ভেসে গিয়ে সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিকের ২১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এবারের বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।  জকিগঞ্জে ৬ হাজার ৩৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ৬২২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৫৯২টি খামার তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকা, কানাইঘাটে ২ হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ কোটি টাকা, বিশ্বনাথে ২ হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬৭৪ কোটি টাকা ও বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি ‍ও দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি খামার তলিয়ে গেছে।

সিলেট জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর এ ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অন্যদিকে, উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।  পানিতে ভেসে গেছে জেলার চার শতাধিক পুকুর।  এতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে অনেকের।  ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ও নিজের কষ্টের সঞ্চয় বিনিয়োগ করে মাছের খামার গড়েছিলেন অনেকে।  সেই খামারের মাছ আকস্মিক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

খামারিরা বলছেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই রাতারাতি বন্যার পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।  মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এখন পুকুরের চারদিকে জালের বেড়া দিচ্ছেন তারা।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  নদীর পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৪০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে।  এতে ৩০ টন বড় মাছ ও ৩৫ লাখ ছোট পোনা মাছ ভেসে গেছে।  ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।  পানি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।