বন্যার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান হাকালুকি পারের মানুষেরা

হাকালুকি তীরের ৫ উপজেলার মানুষ দীর্ঘমেয়াদী বন্যার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান। এজন্য হাকালুকিত পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তারা।

পরিবেশন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হওয়ার পরও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের উন্নয়নে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করা, বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণ না করা এবং হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।

হাওর তীরের বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০০, ২০০৪, ২০১৭ এবং সর্বশেষ চলতি বছর ২০২২ এসব সালে হাকালুকি হাওর তীরে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন উপজেলাগুলোর বন্যায় আক্রান্ত মানুষ। প্রায় প্রতি বছর পানি বাড়ার লেভেল নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে আসছে। যার ফলে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ মেয়াদী বন্যা। হাওর পাড়ের বিজ্ঞজনরা এ থেকে পরিত্রাণ চান। এবং পরিত্রাণের পন্থা খোঁজে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার মানুষ।

হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দা সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. মাসুক জানান, সীমান্তের ওপার থেকে আসুক আর পাহাড়ী ঢল হোক সব পানি ধারণ করতো হাকালুকি হাওর। আগে হাওরের গভীরতা ছিলো এতটাই যে, কেউ হাওরের দিকে নৌকা নিয়ে যাওয়ার সাহস করতো না। আর এখন হাকালুকি হাওরের ৫ কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে মানুষ বসতি গাড়ছে। এসব কিভাবে সম্ভব? এই হাওর নিয়ে কারো কোন চিন্তা নেই। বরং হাওর থেকে মাছ লুট, হাওরের জায়গা জাল দলিল করে কেনাবেচা চলছে অবাদে। এখনই আমাদের ভাবতে হবে এসব নিয়ে। হাওরকে চিহ্নিত করে পরিকল্পিত উন্নয়ন করলেই মুক্তি মিলবে নয়তো বছর বছর নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। আর হাওর পারের মানুষের বাঁচার জন্য নতুন কোন স্থান নির্ধারণ করে ছাড়তে হবে এলাকা।

পরিবেশবাদী সংগঠন শেড অব নেচারের প্রতিষ্ঠাতা আবু সুফিয়ান জানান, আমরা বড় হতভাগা এলাকার বাসিন্দা। পরিবেশমন্ত্রী পেয়েছি কিন্তু পরিবেশের সবচেয়ে বড় ধ্বংস লীলায় আজ আমরা বিপর্যস্থ। একজন মন্ত্রী থাকার পরও হাওর উন্নয়ন বোর্ডে নেই এশিয়ার বৃহত্তম এই হাওরটি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, মন্ত্রী মহোদয়ের ডিওতে হাওরের অভয়াশ্রম বাতিল হয়। কেউ কথা বলে না। প্রতিবাদ করে না। মন্ত্রী কী তাহলে হাওরের ধ্বংস যজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছেন? আমরা ত্রাণ চাই না, পরিত্রাণ চাই- দীর্ঘ মেয়াদী এই দুর্ভোগ থেকে।

জুড়ী উপজেলার হাওর তীরের বাসিন্দা ও সমাজসেবক মামুনুর রশীদ জানান, বন্যা এলে শুরু হয় যেন ভোটের রাজনীতি। ত্রাণ দিয়ে মন জয় করা আর ভোট নেয়া। এভাবে কতদিন চলবে? এ থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া জরুরী। ত্রাণ নিয়েও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির সীমাহীন অভিযোগ। কিন্তু কে শুনে কার কথা? হাওরের সাথে ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা সেতুর সংযোগস্থল বুড়ি কিয়ারি খননের উদ্যোগ নিতে হবে। সংযোগস্থলের মুখে অবস্থিত দু’টি ইটভাটা অপসারণ করতে হবে। ২০১৭ সালে এসব নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অপসারণে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহবুব ও ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একে নজরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি কমলে এক ভুশিমইল ইউনিয়নে ৫শতাধিক বাড়িঘর মানুষ তৈরি করতে হবে। মানুষকে ত্রাণ দেয়া যাবে কিন্তু নতুন ঘর বানিয়ে দেয়া কি সম্ভব? এসব বিষয় নিয়ে নীতিনির্ধারক মহলকে এখনই ভাবতে হবে। শুধু ত্রাণ দিয়ে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ালাম, আর বছর বছর বন্যায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে- এটা কোনভাবে কাম্য নয়। এরচেয়ে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। হাওর তীরের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পনার আওতায় এনে ফ্লাড সেন্টার কাম স্কুলে রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলে মানুষের প্রাথমিক আশ্রয়টা নিশ্চিত হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর জানান, স্বাধীনতার পরে হাওর খনন কিংবা নদী শাসন হয়নি। দেশের মানুষ বাড়ছে, সেই প্রভাব কিন্তু প্রকৃতিতে পড়ছে। ফলে আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগুতে হবে। বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি তিনি সংসদে উত্থাপন করবেন বলে জানান।