বাংলাদেশ ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল রোববার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.২। হালকা মাত্রার এই ভূমিকম্প হয় দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে (উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে)। টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও ঢাকা থেকে কেউ কেউ মৃদু ভূকম্পন অনুভব হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের দাবি, বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণেই ঘন ঘন এ ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এ দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমে রয়েছে, যেগুলো বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে। আগে হোক বা পরে, এই শক্তি বেরিয়ে আসবেই। আর সেটাই জানান দিচ্ছে এই ছোট ভূমিকম্পগুলো। এ ধরনের ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় আকারের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস।
তারা আরো জানান, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের উপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে আছে। অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে। এখানে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়ে আছে। যেকোনো সময় এ শক্তি বের হয়ে আসতে পারে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
দেশে ভূমিকম্পের এমন ঝুঁকি থাকলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি অনেকটাই কম। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম