আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এরই মধ্যে শীতের রিক্ততাকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমনী বার্তায় গাছের শুকনো পাতা ঝরে জন্ম নিয়েছে নতুন কচি পাতার। বসন্তের ঊষালগ্নে সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর পাহাড়ে-অরণ্যে বসন্ত এসেছে নবযৌবনের ডাক দিয়ে। চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে অপরূপ রঙের শোভা।
বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার এই বসন্তের বন্দনা আছে কবির কবিতায়, শিল্পীর গানে, নাচিয়ের নৃত্যে কিংবা চিত্রকরের চিত্রকলায়।
ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনে বাঙালীরা জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যমন্ডিত ইতিহাস আছে।
মোঘল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম ও উৎসবের ধরণটা এখনকার মতো ছিল না। তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্যও।
বসন্তের প্রথম দিনে এদেশের হাজারো তরুণ-তরুণী, সংস্কৃতি সচেতন নারী-পুরুষেরা মেতে উঠেন বসন্ত উন্মাদনায়।
এরই মধ্যে প্রকৃতি থেকে বিদায় দিয়েছে শীতকাল। শীত চলে গেছে রিক্ত হাতে আর বসন্ত এসেছে শিমুল, কৃষ্ণচূড়াসহ হাজারো ফুলের মনোলোভা সৌন্দর্য, ঘ্রাণ আর মধুরতা নিয়ে। বাসন্তী ফুলের মনমাতানো সৌরভে মউ মউ করছে চারপাশ।
এবারের বসন্ত একটু আলাদা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর বসন্তের সূচনালগ্ন একই দিনে হওয়ায় এবার তরুণ-তরণীদের মধ্যে অন্যরকম উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবার ভালোবাসার মানুষের সাথে পহেলা ফাল্গুন কাটবে বাসন্তি রঙ্গেই।
ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে মোহিত বাঙালিরা আনন্দ উল্লাসের মাঝেও স্মরণ করে বায়ান্নোর ফাগুন মাসে শহীদ হওয়া বীরদের কথা। ফাল্গুন এলেই বাঙালির মনে খচখচ করে নাড়া দিয়ে উঠে ভাষা শহীদের রক্তদানের অমলিন স্মৃতিগাঁথা।
ফাগুনে পলাশ, শিমুল গাছের রক্তিম সৌন্দর্যে আর সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বসন্তদূত কোকিলের কুহুকুহু ডাকে ব্যাকুল করে তুলবে সকলের প্রাণ। শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে ফাগুনের প্রথম আলোর ঝলকানি লাগা অনিন্দ্য সুন্দর মুহূর্তে নব উদ্যমেমেতে উঠুক বাঙালিরা।