ফাগুনের জানান দিচ্ছে আগুন রাঙা শিমুল!

শীতের একেবারে শেষভাগ। প্রকৃতি তার জীর্ণতা মুছতে শুরু করেছে। পাতাঝরা ডালগুলোতে দেখা মেলছে নতুন কচি পাতা আর পুষ্প মঞ্জরির সমারোহ। ফুটতে শুরু করেছে রঙ বেরঙের বাহারি ফুল। চারপাশে প্রকৃতির এমন পালাবদল বসন্তের বার্তা জানান দিচ্ছে। প্রকৃতির বুকে বসন্ত চিরসবুজ আর অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। আর তাইতো কবি বসন্তকে ঋতুরাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বসন্তে প্রকৃতিতে নানা রঙ বেরঙের ফুল ফুটে। এর মধ্যে শিমুল ফুলকে বলা হয় বসন্তের বার্তাবাহক। এদিকে ফাল্গুনের শুরু হতে এখনো বাকি সপ্তাহ-দশেক। কিন্তু এরই মধ্যে হাজারো শিমুল গাছে ফোটা লাল টকটকে শিমুল ফুলে ছেয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান।

বাগানটির অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে যাদুকাটা নদী তীরবর্তী মানিগাঁও এলাকায়। ২০০২ সালে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদীন সৌখিনতার বসে প্রায় এক’শ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে দুই হাজার শিমুলের চারা রোপন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে নতুন করে আরো ১ হাজার ৫’শ চারা রোপন করেছেন বাগানের মালিক পক্ষ। সময়ের পরিক্রমায় এটি আজ দেশের সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগানে পরিণত হয়েছে।

ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী নদী যাদুকাটার পাড় ঘেঁষা শিমুল বাগানে ফোটা হাজারো শিমুল ফুলের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য যে কাউকে বিমুগ্ধ করে। বাগানটি দেখতে বছর জুড়েই দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ-তরুণীদের কাছে বসন্ত বরণ ও ভালবাসা দিবস উদযাপনে এই শিমুল বাগান অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় এক’শ বিঘা জায়গা জুড়ে সারিবদ্ধ করে লাগানো হাজারো শিমুল গাছে ফোটা রক্তরাঙা শিমুল ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। যেদিকে চোখ যায় শিমুলের রক্তিম আভায় চোখ আটকে যায়। ওপারে মেঘালয় পাহাড়ের উপর দিয়ে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি, পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে চলা রূপের নদী যাদুকাটা, মধ্যস্থলে হাজারো শিমুল ফুলের লাল আভা, দেখে মনে হবে, প্রকৃতি যেনো তার আপন মহিমায় নিজেকে মেলে ধরেছে এখানে। আর প্রকৃতির এমন অনবদ্য মেলবন্ধন দেখতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠেছে বাগান ও তার আশপাশ এলাকা।

আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে বাগানের ভেতর ছোট একটি ক্যান্টিন গড়ে তোলেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। কিছু বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে বাগানের ভেতর। ঘোড়ায় চড়ে বাগানের সৌন্দর্য্য অবলোকন করা এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। রয়েছে নাগরদোলাও। কেউ ঘোড়ায় চড়ে, কেউবা নাগদোলায় চেপে আবার কেউ কেউ ঝরা শিমুল ফুল দিয়ে তৈরি করা ভালবাসার প্রতীকের ভেতর প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ক্যামেরার রঙিন ফ্রেমে স্মৃতি বন্দী করার কাজে ব্যস্ত।

ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা মাহদী ও মিআ’দ এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউটিউব, ফেসবুকে বাগানটির অনেক ভিডিও দেখেছি। একসাথে এত শিমুল ফুল ও সবুজের সমারোহ দেখে অভিভূত। একই জায়গায় পাহাড়-নদী-শিমুল বাগান, প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেশের অন্য কোনো স্থানে দেখা পাওয়া বিরল। তবে ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে এটুকু জায়গা আসতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে।

সিলেটের খাদিমনগর এলাকার বাসিন্দা ফাহিম মুনতাসির প্রথমবারের মতো বাগানটি দেখতে এসে এর সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে জানান, প্রকৃতি যেনো সৌন্দর্য্যরে সব উপকরণ দিয়ে এ জায়গাটি সাজিয়েছে। ভালবাসা দিবসে পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ঘুরতে আসবো।

শিমুল বাগানের মালিক পক্ষের একজন সাবেক চেয়ারম্যান মো. রাখাব উদ্দিন সিলেট ভয়েসকে বলেন, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসু লোকজন দলবেঁধে এখানে বেড়াতে আসেন। তাই দর্শনার্থীদের সুবিধার দিকটি ভেবে বাগানের ভেতর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বাগানে একটি ক্যান্টিন করা হয়েছে তাছাড়া ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। বাগানকে কেন্দ্র করে এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।