রাজধানীর ইসলামবাগ থেকে শহীদনগর, হাজারীবাগ, কালুনগর হয়ে শিকদার মেডিক্যালের পেছনে রায়েরবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত সাত কিলোমিটার চ্যানেলটি আবর্জনায় ভরাট হয়ে মরতে বসেছিল। ময়লা অপসারণ ও পুনঃখনন শুরুর পর সম্প্রতি এখানে পানির দেখা মিলেছে। এমনকি নৌকাও চলতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচর এলাকা মূলত বুড়িগঙ্গার বুকে জেগে ওঠা একটি চর। এই চর (শহীদনগর থেকে হাজারীবাগ) আর বেড়িবাঁধের মাঝের জায়গাটিই বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল। এক সময় যা ছিল জলাশয়, তা এখন ময়লা-আবর্জনার পাহাড়। দখলদারিত্বের কারণেও কমেছে এর প্রশস্ততা।
তারা আরও জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে নব্বইয়ের দশকে পানির প্রবাহ ছিল। মানুষ তখন এ পথে নৌকায় করে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যেত। বেড়িবাঁধ হওয়ার পর বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল দখল হওয়া শুরু হয়।
আপাতত ৭ কিলোমিটার এ চ্যানেলের ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এর প্রথম পর্বের কাজ গত ২৯ জুন শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং ডিএসসিসির মেয়রের উপস্থিতিতে খনন কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ১৭ আগস্ট আদি বুড়িগঙ্গার বেড়িবাঁধ লোহার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চ্যানেলটিতে এখন পানির অস্তিত্ব আছে। ময়লা তুলতে কাজ করছে একটি ভাসমান খনন যন্ত্র। ময়লা তুলে রাখা হচ্ছে দুই পাশে।
লোহার ব্রিজে দাঁড়িয়ে নতুন রূপ ফিরে পাওয়া খালটি দেখছিলেন কামরাঙ্গীরচর তিন নম্বর গলির বাসিন্দা মো. শাহীন। তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে একসময় ময়লার গন্ধে কেউ দাঁড়াতো না। ময়লার ওপর দিয়ে হেঁটেই লালবাগ থেকে কামরাঙ্গীরচর যাওয়া যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। সেকশন থেকে সোয়ারীঘাট এবং মাদবর বাজার এলাকার কাজটুকু করলে এখানে বড় লঞ্চও চালানো যাবে।’
দক্ষিণ সিটির ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এ খালে নৌকা চালিয়েছি। মূলত ১৯৯১ সাল থেকে এখানে দখল ও দূষণ শুরু হয়। আমরা বালুরঘাট থেকে ময়লা অপসারণ শুরু করেছি। চার-পাঁচ ফুট ময়লা অপসারণ করার পর আমরা পানির দেখা পাই। এখন ১৩ ফুট গভীর রয়েছে।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জুন থেকে গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৯৯৯ ট্রিপে ২১ হাজার ৬৩৫ টন ময়লা অপসারণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের বলেন, ‘আমরা দুটি প্যাকেজের আওতায় সেকশন থেকে লালবাগ বেড়িবাঁধ অংশে কাজ করছি। আমাদের এখন দুটি ফ্লোটিং এক্সকেভেটর কাজ করছে।’
দক্ষিণ সিটির এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে কামরাঙ্গীরচরে এক নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার করতে ডিএসসিসি মেয়রকে নির্দেশনা দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আদি চ্যানেলের অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত হয়। একটি প্রকল্প প্রস্তুতের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করা হচ্ছে।
আদি চ্যানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দখল করা জায়গা খনন করে চ্যানেলটি পুনরুদ্ধার করা হবে।
প্রকল্পের পরিচালক খাইরুল বাকের বলেন, ‘এ চ্যানেলের যাবতীয় আবর্জনা পরিষ্কার ও খনন করে ঢাকার দক্ষিণ অংশে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এতে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচরের জলাবদ্ধতা দূর হবে। ওইসব এলাকা থেকে নির্গত পানি ইটিপি ও সিইটিপি দ্বারা পরিশোধিত আকারে নদীতে নিষ্কাশিত করার ব্যবস্থা থাকবে। চ্যানেলের দুই প্রান্তে নতুন রাস্তা, সাইকেল লেন, বৃক্ষরোপণ, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকাবাসীর জন্য একটি নতুন বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হবে এটি।’