এগারো বছর পর এশিয়া কাপে ভারত বধ

শেষবার এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ ২০১২ সালে। শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির দিনে সেদিন বাংলাদেশ জিতেছিলো ৫ উইকেটে। তারপর আর এশিয়াকাপে ভারতকে হারাতে পারেনি টাইগাররা। এগারো বছর পর শ্বসরুদ্ধকর ম্যাচে ৬ রানে জিতে সেই বন্ধ্যাত্ব ঘুছিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান করে বাংলাদেশ। টার্গেট তাড়ায় ওপেনার শুভমান গিলের সেঞ্চুরি আর অক্ষর প্যাটেলের শেষ দিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পরও ২৫৯ রানে অলআউট হয় ভারত।

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫.৪ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে টাইগাররা।

ভারতীয় তারকা পেসার মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিটন কুমার দাস। লিটনের মতো একই অবস্থা তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের। তিনি শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। ৩.১ ওভারে ১৫ রানে ফেরেন দুই ওপেনার। এনামুল হক বিজয়ও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি। তিনি ফেরেন ১১ বলে মাত্র ৪ রানে।

দলীয় ৫৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মিরাজ। তার আগে ২৮ বলে এক বাউন্ডারিতে ১৩ রান করেন এই অলরাউন্ডার। এরপর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা ১১৫ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন। ৮৫ বলে ৬টি চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান করে ফেরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৫ বলে মাত্র ১ রান করেন শামিম হোসেন।

দলীয় ১৯৩ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। তার আগে ৮১ বলে ৫টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪তম ম্যাচে পঞ্চম ফিফটি হাঁকান তাওহিদ।

সাকিব-হৃদয় আউট হওয়ার পর মনে হয়েছিল দ্রুতই ইনিংস গুটাবে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষদিকে অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং করেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মেহেদি হাসান। তারা অষ্টম উইকেটে ৩৬ বলে ৪৫ রানের ‍জুটি গড়েন।

ক্যারিয়ারের নবম ওয়ানডেতে দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটির পথেই ছিলেন নাসুম আহমেদ। আগের ৮টি ওয়ানডেতে সবমিলে ৪৪ রান করা এই স্পিনার এদিন খেলেন ৪৫ বলে ৬টি চার আর এক ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস।

নাসুম আউট হওয়ার পর দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যান মেহেদি হাসান। তিনি ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ২৩ বলে তিন বাউন্ডারিতে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।

শেষদিকে নাসুম আহমেদ ও মেহেদি হাসানের দারুণ ব্যাটিংয়ে দুইশর কোটায় অলআউটের শঙ্কা কাটিয়ে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ভারতের হয়ে ৩ উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৬৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৭ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় ভারত। রোহিত শর্মা ও তিলক ভার্মাকে ফেরান অভিষিক্ত তরুণ পেসার তানজিদ হাসান সাকিব। তার লেংথ বলে শরীর থেকে দূরে ব্যাট নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রোহিত শর্মা। কাভারে এনামুল হকের হাতে ক্যাচ দিয় ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক।

তানজিমের দ্বিতীয় শিকার তিলক ভার্মা। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে তানজিমের বলে আউট হয়েছিলেন তিলক। ২০২৩ সালে এশিয়া কাপে ফের তানজিমের বলেই আউট হন তিলক। অভিষেকের প্রথম ২ ওভারে ২ উইকেট নেন তানজিম।

১৭ রানে রোহিতের পর তিলকের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। এরপর তৃতীয় উইকেটে ৮৭ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন শুভমান গিল ও লোকেশ রাহুল। এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটান মেহেদি হাসান। তার শিকার হয়ে ফেরেন লোকেশ রাহুল।

এরপর ভারতীয় শিবিরে চতুর্থ আঘাত হানেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার শিকার হয়ে ফেরেন ইশান কিশান। ৯৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে ৫৫ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন শুভমান গিল। সূর্যকুমারকে আউট করে জুটি ভাঙেন সাকিব।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শিকার হওয়ার আগে ৩৪ বলে তিন বাউন্ডারিতে ২৬ রান করেন সূর্যকুমার। তার বিদায়ে ৩২.৪ ওভারে ১৩৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত।

মোস্তাফিজের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মিস করেন রবিন্দ্র জাদেজা। বল গিয়ে সোজা আঘাত হানে স্টাম্পে। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন রবিন্দ্র জাদেজা। তার আগে ১২ বলে করেন ৭ রান।

ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন শুভমান গিল। তিনি ইনিংসের শুরু থেকেই একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান। জয়ের জন্য শেষ দিকে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩৮ বলে ৫৭ রান। খেলার এমন অবস্থায় মেহেদি হাসানের শিকার হয়ে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন শুভমান গিল। তার আগে ১২৮ বলে ৮টি চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ১১৩ রান করেন।

শুভমান গিল আউট হওয়ার পর শার্দুল ঠাকুরের সঙ্গে ২৮ বলে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান অক্ষর প্যাটেল। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। মোস্তাফিজের করা ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন শার্দুল ঠাকুর। তার আগে ১৩ বলে ১১ রান করেন তিনি।

জয়ের জন্য শেষ ১১ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অক্ষর প্যাটেল। তিনি ৪৩ বলে ৩টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ৪২ রান করে ফেরেন।

জয়ের জন্য শেষ ৮ বলে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। ৪৯তম ওভারের শেষ দুই বলে রান নিতে পারেননি প্রসাদ কৃষ্ণা। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। বাংলাদেশের দরকার ছিল মাত্র ১ উইকেট। তিনটি ডট বলের পর তানজিম সাকিবের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকান মোহাম্মদ শামি। পরের বলেই দুই রান নিতে গিয়ে হন রান আউট। ভারত থামে ২৫৯ এ।

বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজ নেন ৫০ রানে তিন উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব ও মেহেদি হাসান।