প্রকৃতির উপর সকল অনাচার বন্ধ করা হবে : মজিবর রহমান

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেছেন, ২০২০ সাল থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায়, আমরা কিছুটা হলেও পরিবেশ ফিরে পেয়েছি। এই ধারা অব্যাহত রেখে পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পরিবেশকে সমুন্নত রেখে বালু ও পাথর উত্তোলন করা দরকার। আমাদেরকে অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন রোধে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে দুইটি স্টোন ক্রাশার জোন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের স্বদিচ্ছা আছে। আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির উপর সকল অনাচার বন্ধ করা হবে। পূর্বের তুলনায় প্রশাসন অনেক বেশি জনবান্ধব। আমরা তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে চাই।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে ফিরেছে কি প্রকৃতি’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সোমবার (০৩ অক্টোবর) সকালে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের বলরুমে সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা’র প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রকৃতি যদিও পূর্বের অবস্থানে ফিরেনি, তবুও আগের তুলনায় যথেষ্ট ভালো আছে। অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলনের দায়ে গতবছর সিলেটে মামলা হয়েছে ৫৩টি। তারমধ্যে ৫১টি মামলার চার্জশীট আমরা দিয়েছি। অর্থাৎ প্রকৃতির উপর অনাচার করে কেউ রক্ষা পাবে না। সকলকেই বিচারের আওতায় আনা হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘জাফলং জাতীয় এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা নদী রেখে যাবো নাকি ফিউচার পার্ক রেখে যাবো, সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরকে নিতে হবে। পাথর উত্তোলনের জন্য আমাদের নদীকে ধ্বংস করতে দেয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্তবর্তী এ ৪ টি উপজেলায় সরকারি তালিকাভূক্ত ৮টি পাথর কোয়ারী আছে। প্রতিটি স্থানই কোনো না কোনো কারণে বিশেষ প্রাকৃতিক গুরুত্ব বহন করে। ভোলাগঞ্জ, উৎমাছড়া, চিকাডহর, রতনপুর, জাফলং, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া ও শ্রীপুর আসল চেহারা হারিয়ে ফেলেছে।

জীব বৈচিত্র্য তথা পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতা আহ্বান জানান তিনি।

এসময় মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সনাকের সভাপতি সমিক সহিদ জাহান, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, জুবায়ের আহমদ, মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা, এ.কে. শেরাম, নাসিমা চৌধুরী, সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, বন কর্মকর্তা মো. সাদ উদ্দিন আহমদ, ড. মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সার্বিক অবস্থার উপর ধারণা প্রদান করেন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ চাহিদা মেটে। মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদার জন্য আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিতে পারি না। এজন্য সকলের সোচ্চার দাবিতে এটা বন্ধ করা দরকার। প্রকৃতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। এইসব অনাচার বন্ধে সিলেটের পাহাড়, নদী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার দাবিও জানানো হয়।