নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা: বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

নড়াইলের কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৮ জুলাই) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বাড়িছাড়া। তার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। তবে তার বাড়ির সামনে পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক পেজে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের ফটকের সামনে পেয়ে ১০–১২ জন ছাত্র অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন কলেজের হিসাবরক্ষক আলাউদ্দীন মোল্লা তাদের শিক্ষকদের কক্ষে নিয়ে যান। ছাত্ররা তখন ওই শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টটি অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ শিক্ষকদের দেখায়।

ফেসবুক পোস্টটি দেখার পর স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজের শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। সাদাপোশাকে যাওয়া তিন পুলিশ সদস্য ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগত কয়েকজন বাধা দেয়। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়।

ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দুপুরের পর প্রথমে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) কিছু পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তবে তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। এর মধ্যেই কলেজের তিনজন হিন্দু শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আরও পুলিশ নিয়ে সেখানে যান নড়াইলের পুলিশ সুপার।

একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকও কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। বিকেল চারটার দিকে হ্যান্ডমাইকে জুতার মালা পরানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থী কলেজের ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তাদের কক্ষটি থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়।