ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তার খরচ হয়েছিল বিপুল অঙ্কের টাকা। নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে উপহার দিতে হয়েছিল একটি প্রাডো গাড়ি। জেতার পরে নির্বাচনের সেই খরচ তোলার জন্য অভিনব প্রতারণার জাল বিস্তার করেন ইউপি চেয়ারম্যান। তার সেই প্রতারণার শিকার হন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশের সদস্যসহ প্রায় ৩০০ মানুষ।
এভাবে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা থেকে মো. জাকির হোসেন (৪৩) নামের ওই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি প্রাইভেট কার।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার জাকির হোসেন কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। জাকির বন্দর থেকে কম দামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা নেয়। তারপর সেই গাড়ি রেন্ট এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনার চুক্তি করে। একই গাড়ি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করে। আবার একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে।’
‘শুধু তা-ই নয়, কারও সঙ্গে শুধু ইঞ্জিন নম্বর দিয়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধের শর্তে চুক্তি করে। কিছুদিন কিস্তি পরিশোধও করে। পরে কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। এ ছাড়া আগের বিক্রি করা গাড়ি কম দামে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।’ বলেন এই কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জাকির পুলিশকে জানিয়েছে, নির্বাচনে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা তোলার জন্য সে এ কাজ করত। পাশাপাশি ঢাকা শহরের অনেক প্লট ও বাড়িও কিনেছে, ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগামী নভেম্বরে তার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। আমরা সব বিষয় পর্যালোচনা করছি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং যাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছিল, সেগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। প্রয়োজনে সিআইডিতে মামলা হস্তান্তর করবো।’
জাকির দীর্ঘদিন ধরে শত শত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে জানিয়ে হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আগেও তাকে গ্রেফতার করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। অনেকেই তার জন্য সুপারিশ করেছিল। বলেছে তাকে গ্রেফতার করা হলে টাকা পাওয়া সম্ভব হবে না। তিন মাস তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ সময় এক-দুজন ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে কোনও টাকা পরিশোধ করেনি সে। তারপর বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশের লোকজনসহ বিভিন্ন বড় বড় পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলত। তাদেরও লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিত। এ সুযোগে তাদের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলে রাখত। তারা টাকা চাইলে বারবার সময় নিত। এর মাঝেই এসব ছবি দেখিয়ে সাধারণ লোকজনকে বলত যে আমার সঙ্গে হাই প্রোফাইল লোকজন কাজ করে। এভাবে সবার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করতো।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাকির প্রতারিত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে ডাউন পেমেন্টে গাড়ি কিনতো। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে ক্রেতাকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতো।
জাকির সারা দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০০ মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার জাকিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণার মামলা হয়েছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ।