নিরবে কাটবে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। দারিদ্র্যের সঙ্গে আজন্ম যুদ্ধ ছিল তার। কৃষি কাজের পাশাপাশি রচনা করেন কালজয়ী সব লোকগান। সমাজের নানা কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সুরে সুরেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার জীবদ্দশায়।

শাহ আবদুল করিম জীবনভর তার গানে অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন। তার গানে যেমন প্রেম-বিরহ ছিল, তেমনি ছিল খেটে খাওয়া মানুষের কথা। একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ভাবনাও রয়েছে তার সৃষ্টিকর্মের বিশাল অংশজুড়ে। অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যে বেড়ে ওঠা বাউল করিমের বয়স যখন ১২, তখন রাখালের কাজ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ধলবাজারের এক মুদি দোকানে কাজ নেন। দিনে চাকরি আর রাতে হাওড়-বাঁওড় ঘুরে গান গাইতেন। ওই সময় গ্রামের নৈশবিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়াশোনা হয়নি তার। গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউল, ভাটিয়ালি ও পালাগান করতেন তিনি।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্বের সময়ও তিনি গান গেয়ে মানুষকে উৎসাহিত এবং সংগঠিত করে রাখতেন।

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, বন্দে মায়া লাগাইছে, রঙের দুনিয়া চাই না, কৃষ্ণ আইল রাধার কুঞ্জে, গান গাই আমার মনরে বুঝাই, বসন্ত বাতাসেসহ অজস কালজয়ী গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিম। বাংলা সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখায় পেয়েছেন একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, জাতিসংঘের সম্মাননা, লেবাক অ্যাওয়ার্ডসহ নানা সম্মাননা।

প্রতি বছর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ও বড় পরিসরে যেন শাহ আব্দুল করিমের লোক উৎসব পালন করা হয় এবং উনার গান গুলো যাতে সঠিক ভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং করিম সাংস্কৃতিক একাডেমি যাতে দ্রুত নির্মাণ করা হয় সেই দাবি জানালেন সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

বাউল সম্রাটের মৃত্যু বার্ষিকীতে সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে তেমন কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নি।

সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল চৌধুরী পাভেল জানান, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে তেমন আয়োজন নেই। তবে উনার ছেলে শাহ নূর জালালের সাথে কথা হয়েছে। আজ বিকেলে শাহ আবদুল করিমের আত্মার শান্তি কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরে আবদুল করিমের ভক্তরা বিকেল থেকে সারা রাত তার স্মরণে গান গাইবেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শাহ আবদুল করিম কমপ্লেক্সের জন্য জায়গায় নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে কমপ্লেক্স নির্মাণ হলে শাহ আবদুল করিমের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী ভালভাবে উদযাপন করা সম্ভব হবে।